খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৭:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুন্দরবনে চলছে হরিণ শিকারের মহোৎসব

খুলনার কয়রা থেকে হরিণের ৫৩ কেজি মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি : কালবেলা
খুলনার কয়রা থেকে হরিণের ৫৩ কেজি মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি : কালবেলা

সুন্দরবনে চলছে হরিণ শিকারের মহোৎসব। অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে এসব হরিণ শিকার করছে পাচারকারীরা। এতে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ, হরিণ অস্তিত্ব হারাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের হরিণসহ সব বন্যসম্পদ রক্ষায় আরও কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে।

এসব পাচারকারীকে ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে বুধবার (১৯ জুলাই) ভোরে খুলনার কয়রা থেকে হরিণের ৫৩ কেজি মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার ৪ নম্বর কয়রায় শাকবারিয়া খালের পাশে অভিজান চালিয়ে এ মাংস উদ্ধার করা হয়। তবে খালে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায় পাচারকারী।

উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। গত তিন মাসে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৩২ কেজি হরিণের মাংস, একটি গলাকাটা হরিণ, পাঁচটি চামড়া ও মাথা জব্দ করে প্রশাসন। এ সময়ে মামলা হয়েছে ১০টি, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন। গত এক বছরে এর সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। সম্প্রতি তিন মণ হরিণের মাংসসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল কয়রা উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নির্বিচারে হরিণ নিধনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ পায়।

জানা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই চিত্রা হরিণ। কিন্তু দিনের পর দিন প্রশাসনের রেড এলার্ডসহ বিভিন্ন অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হরিণ নিধন করে যাচ্ছে পাচারকারীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় দাম কম হওয়ায় এই বন্যপ্রাণীর মাংসের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে গত কয়েক মাস ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি চক্র অনেক আগে থেকেই হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত। বন বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে অগ্রিম ‘দাদন’ নিয়ে জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনে ঢুকে চোরা শিকারিরা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে ‘এজেন্ট ব্যবসায়ীদের’। এই এজেন্টদের মাধ্যমে কখনো অগ্রিম, আবার কখনো মাংস এনেও বিক্রি করা হয়। এই চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানেও পৌঁছে যায় হরিণের মাংস।

সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, বন্যপ্রাণি শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। যে পরিমাণ হরিণের মাংস ও চামড়া জব্দ হয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি হরিণ শিকার হয়।

অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির আরও বলেন, মাঝে মধ্যে দু-একটি অভিযানে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা জব্দ হলেও মূল চোরা শিকারি ও পাচারকারীরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাংস বহনকারীরাই ধরা পড়ে। তারা দুর্বল আইনের কারণে কয়েকদিন পর জেল থেকে ফিরে একই কাজে লিপ্ত হন।

তিনি আরও বলেন, বনে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ। সুন্দরবনের ইকো সিস্টেমের ভারসাম্য রাখতে সব প্রাণিরই প্রয়োজন। কোনো একটি না থাকলে সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা সোলায়মান গাজী বলেন, সুন্দরবন প্রভাবিত কয়রার গ্রামগুলোতে বেশিরভাগই শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। এসব গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ সুন্দরবনকেন্দ্রিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ উপজেলার ৩০টির বেশি চোরা শিকারি চক্র নির্বিচারে সুন্দরবনের হরিণ নিধন করছে।

কয়রার ইউএনও মো. মমিনুর রহমান বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রায় সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধপ্রবণতার চিত্র তাদের উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশেষত হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বন বিভাগকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেনের ভাষ্য, অল্প জনবল দিয়ে এত বড় বনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় বন বিভাগের। তারপরও হরিণ শিকার আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে। র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের নিয়মিত টহলের কারণে এখন বনে হরিণ শিকারের সুযোগ কম।

মোহসিন বলেন, বনে জলদস্যুরাই বেশি হরিণ শিকার করে খেত। ২০১৮ সালে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ায় পর এবং গত কয়েক বছর রাসমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বনে হরিণ শিকার কমেছে।

তা ছাড়া সম্প্রতিক বন্যপ্রাণী রক্ষায় অপরাধে জড়িতদের তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণার ফলে চোরা শিকারিদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ তথ্য দিতে উৎসাহিত হয়েছে। এখন মাংসসহ হরিণ শিকারি বেশি ধরা পড়ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেশবপুরে মন্দির থেকে স্বর্ণালংকার, শালগ্রাম শিলা চুরি

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার আগে যা ভাবতে বললেন নুর

অনলাইন জুয়া চক্রের শীর্ষ এজেন্ট লিপু রিমান্ডে

ভারতীয় নাগরিক জগদীশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

পবিপ্রবিতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘পর্দা কর্নার’ চালু

ভোটারদের পছন্দে এগিয়ে কোন দল, উঠে এলো জরিপে

আহান পান্ডে ও অনীত পড্ডাকে নিয়ে প্রেমের গুঞ্জন

শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় সরগরম চবি ক্যাম্পাস

চমেক হাসপাতালে হাজতির মৃত্যু

না ফেরার দেশে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট দলের শেষ জীবিত সদস্য

১০

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে এবার দেশ ছেড়ে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

১১

আশুলিয়ায় ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১২

‘নির্বাচনে পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলে কঠোর ব্যবস্থা’

১৩

খাদ্য ফোরামে প্রধান উপদেষ্টার ৬ প্রস্তাব

১৪

রাকসু নির্বাচনে ব্যতিক্রমী প্রচারপত্র : মাটিতে ফেললেই জন্মাবে গাছের চারা

১৫

হজ নিবন্ধনে সাড়া নেই, এখনো ফাঁকা ৭৫ হাজারের বেশি আসন

১৬

চাকসু নির্বাচন / জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় শিবির, মরিয়া অন্যরাও

১৭

সালমান শাহর মৃত্যুর মামলার শুনানি শেষ, রায় চলতি মাসে

১৮

১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে সরকার, আশ্রয়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা : প্রধান উপদেষ্টা

১৯

নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে সিটি করপোরেশনে স্মারকলিপি দেবে বিএনপি

২০
X