রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বশির হোসেন, খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ১১:০১ পিএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, ১১:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

শ্রমে ঘামে এবার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই

খুলনা উপকূলে সেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হচ্ছে একটি বাঁধ। ছবি : কালবেলা
খুলনা উপকূলে সেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হচ্ছে একটি বাঁধ। ছবি : কালবেলা

খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রলয়ংকারী তাণ্ডবে প্রাচীন এই বাজার সংলগ্ন দুটি স্থানে বাধ ধসে আশপাশের ৭টি গ্রাম এখন পানির নিচে। সোমবার সারাদিন এবং মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা হিসেবে নিজেরাই বাঁধ মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সঞ্জয় সরদার। দিনরাত নিজেই লড়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে। কখনো মাটি কাটছেন আবার কখনো মাথায় করে সেই মাটি নিয়ে ফেলছেন বাঁধের ওপর। শারীরিক কষ্ট তাকে ছুঁতে না পারলেও ক্ষোভে শরীর ঘামছিল বারবার।

ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে আবেগতাড়িত হয়ে এই ইউপি সদস্য বলেন, জাইকার মাধ্যমে এলাকায় বাঁধের সংস্কারের প্রকল্প এসেছে কয়েক মাস আগে। এতবার অনুরোধ করলাম, এখানের একশ মিটার মাত্র এই বাঁধটি আগে সংস্কার করতে, কোনো কথা শুনল না। ফলে রিমাল শেষ করে দিল সবকিছু। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানরা আসছেন এসে কী করবেন, সময়মতো কাজ না করলে এই এলাকা নদীতে বিলীন হতে আর সময় লাগবে না। তাই অস্তিত্ব রক্ষায় এলাকার মানুষ নিজেরাই বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন।

সরেজমিন তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে দেখা যায়, কয়েকশ’ স্থানীয় মানুষ বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন। বটবুনিয়া বাজার, কামনিবাসিয়ায় ঢাকি নদীর তীরে, পানখালি-খালসি এলাকায় পশুর নদের তীরসহ আশপাশে কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

শুধু দাকোপ নয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রার ৫৫ পয়েন্টে বাঁধে ভাঙন ও বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে গেছে ঘর-বাড়ি, ভেসে গেছে ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের-পুকুর।

খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খুলনার ৫৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য গ্রাম। এর মধ্যে ৩২টি পয়েন্টে ১ দশমিক ৭০৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। আর ২৩টি পয়েন্টের ৩ দশমিক ৬৮৮ কিলোমিটার বাঁধ ওভারফ্লো হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। ১২ হাজার ৭১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ধান, পাট, তরমুজ ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমির ৫ হাজার ৫৭৫টি মাছের ঘের এবং ৩০৭ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৩০০টি পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের চাপে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করেছে।

এই এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, রাত থেকেই স্থানীয়রা নিজেরাই ঝুঁকিতে ঝড় মাথায় নিয়ে অস্তিত্ব রক্ষায় প্রাণান্তর চেষ্টা করেছে বাঁধ রক্ষার, কিন্তু এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি।

খুলনার পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধ শতাধিক গ্রাম। যাতে চিংড়ি ঘেরসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। প্রত্যেকটি বাঁধই স্থানীয়রা নিজেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছে কোনোরকম, পূর্ণ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন জানান, উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন কালবেলাকে বলেন, উপকূলীয় তিন উপজেলার ৫২টি ওয়ার্ডেও প্রায় ৭৭ হাজার ঘড়বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চার লাখের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার ৫৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য গ্রাম। এর মধ্যে ৩২টি পয়েন্টে ১ দশমিক ৭০৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। আর ২৩টি পয়েন্টের ৩ দশমিক ৬৮৮ কিলোমিটার বাঁধ ওভারফ্লো হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। ১২ হাজার ৭১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ধান, পাট, তরমুজ ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্ট

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

১০

চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্য, ৩ দিনেই ক্যানসার থেকে সুস্থ হলেন নারী

১১

‘টাইম টু টাইম’ শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন ডা. জুবাইদা

১২

বিএনপি সবসময়ই ‘পলিটিক্স অফ কমিটমেন্টে’ বিশ্বাসী : রিজভী

১৩

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৪

মির্জা আব্বাসের আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভিপি সাদিক কায়েম

১৫

‘দেশের অগ্রযাত্রায় প্রবাসী তরুণদের জ্ঞান-প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে যুক্ত করতে হবে’

১৬

বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক চায় ভারত : প্রণয় ভার্মা

১৭

চায়ের দোকানে বিমান হামলা, নিহত ১৮

১৮

ববি ছাত্রদলের নেতৃত্বে মোশাররফ-শান্ত-মিজান

১৯

ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই প্যান্ডেল ভাঙচুর

২০
X