ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সড়ক নয়, বাড়ির উঠান

সড়কের ওপর চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ছবি : কালবেলা
সড়কের ওপর চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ছবি : কালবেলা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী-দিনাজপুর-মধ্যপাড়া-রংপুর-বগুড়া সঙ্গে সড়কপথের যোগাযোগের মাধ্যম সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চলছে ধান ও ভুট্টা মাড়াই। মহাসড়কের পাশে রয়েছে সারি সারি খড়ের পালা। আর সড়কজুড়ে শুকানো হচ্ছে ভুট্টা, ধান ও খড়।

শুধু ফুলবাড়ী-মধ্যপাড়া-রংপুর মহাসড়কই নয়, ফুলবাড়ী-দিনাজপুর, ফুলবাড়ী-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ গ্রামীণ সড়কগুলোও এখন ধান ও ভুট্টা মাড়াই এবং শুকানোর কাজে চাতালে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ২১ মে বিকেলে মহাসড়টির মহেষপুর চৌরাস্তা মোড়ে একটি ট্রাক ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ২৩ মে আয়শার মোড় এলাকায় দুর্ঘটনায় শরিফুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও সম্প্রতি সড়কে ভুট্টা শুকানোর কাজ করার সময় এক শিশু দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর ভুট্টা ও বোরো ধান মৌসুমে (মে-জুন) মহাসড়কটি কৃষকদের দখলে থাকে। এ সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও নয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

ফুলবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে গত বছরের এই সময়ে দুর্ঘটনায় অন্তত ৭ জন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। দলদলিয়া ডাঙ্গাপাড়া, মহেষপুর, তেঁতুলিয়া, চিলাপাড়া, ভাগলপুর, ভালকা জয়পুর, মহিষবাতান, রসুলপুরসহ ১০টি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমির ধান ও ভুট্টা এই মহাসড়কের ওপর মাড়াই ও শুকানোর কাজ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে খড়ের পালা দেওয়া হয়েছে। অনেকে যন্ত্র দিয়ে মহাসড়কের ওপর ধান মাড়াই করছেন। মাড়াই শেষ হওয়ার পর খড় ও ধান মহাসড়কের ওপর শুকানো হচ্ছে। আর এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন।

উপজেলা খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর নারায়ণপুর গ্রামের ফুলবাড়ী-বিরামপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দেখা যায়, আঞ্চলিক এ সড়কটি যেন ধান মাড়াইয়ের উঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে মাড়াই করছেন এসব ধান। মাড়াই শেষে অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন শুকানোর জন্য। শুকানোর পর সড়কের পাশেই খড় স্তূপ করে রেখেছেন অনেকে। এ ছাড়া কেউ কেউ ভুট্টাও শুকাচ্ছেন সড়কে। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, থ্রিহুইলার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ট্রাক্টরসহ অন্যান্য যানবাহন।

ফুলবাড়ী-বিরামপুর-হাকিমপুর সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক রশিদুল ইসলাম বলেন, ব্যস্ততম এই সড়কজুড়ে ধানমাড়াইয়ের কাজ করায় যানবাহন চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে সড়কে যারা ধান মাড়াই বা শুকানোর কাজ করছেন তাদেরও নিরাপত্তা নেই।

রহমত আলী ও যোগেশ চন্দ্র রায় নামের পথচারী বলেন, কয়েক দিন আগে সড়কে বিছানো খড়ে পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক। এ ছাড়াও একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাঁদে পড়েছিল। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ধান-ভুট্টা মাড়াই ও শুকানোর কাজ বন্ধ করা দরকার।

জিয়ার মোড় এলাকায় ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে কর্মরত কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, এখন কেউ আগের মতো বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা রাখে না। নিরূপায় হয়ে মহাসড়কটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

ফুলবাড়ী-বিরামপুর সড়কে ধানমাড়াইকারী শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, অল্প সময়ের জন্য রাস্তায় ধান মাড়াই করা হয়। এতে যানবাহনের সাময়িক একটু ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই। নিজস্ব চাতাল কিংবা বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়কে এ কাজগুলো করতে হচ্ছে।

ট্রাকচালক আব্বাস উদ্দিন ও মাইক্রো বাসচালক কামাল চৌধুরী বলেন, খড়, ধান ও ভুট্টা শুকানো ও মাড়াইসহ সড়কের দুই পাশে খড় পালা করে রাখার জন্য রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এতে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘটে বিপত্তি। এ সময় যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের ফুলবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক বলেন, সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারীদের ঝুঁকি এড়াতে ধান ও ভুট্টা মাড়াই কিংবা খড় শুকানোর কাজ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্‌ তমাল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি। জনস্বার্থে দ্রুত অভিযান চালিয়ে এসব বন্ধ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেঘনা-গোমতী সেতুর নিচে মিলল বোমা সদৃশ বস্তু

মার্চে চলবে পাবনা-ঢাকা ট্রেন : শেখ মঈনুদ্দিন 

অবৈধ ফোন বন্ধে অনড় সরকার 

হাত-পা বেঁধে খালে ফেলা কিশোরী ফিরে এলো, অতঃপর...

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে সিইসি

আফগান সীমান্তে হামলায় পাকিস্তানের ছয় সেনা নিহত

তপশিল ঘোষণার তারিখ জানালেন ইসি মাছউদ

যে শর্ত না মানলে প্রাথমিকের শিক্ষক-কর্মকর্তারা বেতন পাবেন না

লুচি, কচুরি আর পুরির পার্থক্য জানেন তো

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

১০

ওটস নিয়মিত খেলে কী ঘটে শরীরে? জেনে নিন

১১

১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

১২

সীমান্তে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলেন মেয়ে

১৩

বিদেশে ফার্স্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে চায় দুদক

১৪

স্থগিত লাতিন বাংলা সুপার কাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ

১৫

এদেশে আর আমি-ডামি নির্বাচন হবে না : সেলিমুজ্জামান

১৬

ভারতে পর্যটক গমনে টানা পাঁচ বছর দ্বিতীয় বাংলাদেশ

১৭

আলিমে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

১৮

খেলোয়াড়দের কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপে নতুন নিয়ম আনছে ফিফা

১৯

দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে : অর্থ উপদেষ্টা

২০
X