রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল, আশাশুনি (সাতক্ষীরা)
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব

খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ক্লাসরুম, খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। ছবি : কালবেলা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ক্লাসরুম, খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। ছবি : কালবেলা

কখনো রোদ, কখনো দমকা হাওয়া, আবার কখনো বৃষ্টি। এভাবেই খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের টিনসেড বিধ্বস্ত হয়েছে। তারপর থেকে শত বছরের পুরাতন এই বিদ্যালয়টিতে এখন শ্রেণি কক্ষ সংকট হওয়ায় বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে এভাবেই ক্লাস পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, আজ থেকে একশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৫০। পড়ালেখার মানও যথেষ্ট উন্নত। নিয়মিত ক্লাস পরিচালনাসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যালয়ের একটি ভবনের টিনসেড লন্ডভন্ড হওয়ায় ক্লাস পরিচালনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মূলত ভবনটিতে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস বসত। এখন বাধ্য হয়ে ৩য় শ্রেণির ৬১ জন ছাত্রছাত্রী ও প্রাক-প্রাথমিকের ৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম আসলে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা।

এই বিদ্যালয়ের প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নজর কাড়বে যে কারোর। কিন্তু ক্লাসরুম সংকট ও বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে জলাশয় থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি আতংকিত থাকেন অভিভাবকরা। সংগত কারণেই ক্লাস রুমের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও বর্তমানে বিদ্যালয়ের অফিস রুমসহ প্রাক প্রাথমিকের জন্য নির্ধারিত রুমের অবস্থাও নাজুক। ফাটল দেখা দিয়েছে পিলারে, খসে পড়েছে ছাদের বিভিন্ন অংশের প্লাস্টার। যে কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

খোলা আকাশের নিচে পাঠদানকালে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা রোজিনা খাতুন বলেন, প্রখর রোদের মাঝে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মাঠে ক্লাস করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি এলে আমাদের ক্লাস বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার পর আমাদের বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ে আর কোনো ভবন হয়নি। এ ছাড়া দুই ধারে পানি থাকায় সীমানা প্রাচীর খুবই প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাকিলা খাতুন জানান, স্কুলের পুরাতন ভবনটি নিলামে বিক্রয়ের পর ২০২০ সালে সয়েল টেস্ট করা হয়েছিল। তখন একটি নতুন ভবন অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নতুন ভবন নির্মাণের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কবে নাগাদ নতুন ভবন হবে সেটি বলাও মুশকিল। তাই বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়টির ক্লাস পরিচালনা ভেস্তে যেতে পারে। এ নিয়ে শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি, অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের দাবি, বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এ সময় দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের টিনসেড সংস্কারে জোর আবেদন জানানো হয়।

অপরদিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল করিম বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয়ে এ অঞ্চলের সব থেকে পুরাতন একটি বিদ্যালয়। অথচ বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ক্লাসরুম সংকট, নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন প্রাচীর খুবই দরকার। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার বর্মন জানান, টিনসেড উড়ে যাওয়ায় মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলে টিনসেড সংস্কার করে পাঠদানের উপযোগী করা হবে। এ ছাড়াও নতুন ভবনের জন্য এই বিদ্যালয়ে সয়েল টেস্ট করা হয়েছিল কিন্তু নতুন ভবন কেন হয়নি তা আমার অজনা। বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সীমানা প্রাচীরের জন্য সিরিয়াল অনুসারে আবেদন করা আছে ধারাবাহিকভাবে এটা করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধেয়ে আসছে অতি ভারী বৃষ্টিবলয় ‘স্পিড’, কবে কোথায় প্রভাব ফেলবে

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার

ইমিগ্রেশনের সময় যে ৭ কথা বললেই মহাবিপদ

সাগর-রুনির সন্তান মেঘের হাতে পূর্বাচলের প্লটের দলিল হস্তান্তর

৮ মামলায় ইমরান খানের জামিন

মাদ্রাসাপ্রধানদের জন্য অধিদপ্তরের জরুরি নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

বরাদ্দ পেল বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

যে বয়সের আগেই শিশুকে ৮ শিক্ষা দেওয়া জরুরি

১০

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে কমিটি

১১

চট্টগ্রাম-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিল্টন ভুঁইয়া

১২

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিয়ে ‘সুখবর’ পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

১৩

ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার ৮ কৌশল

১৪

বাড়ির আঙিনায় বিষধর পদ্মগোখরা, অতঃপর...

১৫

মোবাইল দিয়েই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি তোলার ৫ কৌশল

১৬

বরইতলা নদীর ‘বাঁধ’ এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর

১৭

ইস্পাত খাতে বিশেষ তহবিল চান ব্যবসায়ীরা

১৮

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী পাকিস্তান

১৯

উপকূলজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত, জনজীবনে দুর্ভোগ

২০
X