দেখতে গরু বা মহিষের মত দেখা গেলেও আসলে এটি গরু বা মহিষ নয়। অনেকেই হয়তো এ প্রাণীর সঙ্গে পরিচিত নয়। এটি পাওয়া যায় বনের গভীরে বা পাহাড়ী এলাকায়। তবে এখন অনেকেই এটি গৃহ পালিত পশু হিসেবে গরুর মতই লালনপালন করেছেন। দিচ্ছেন কোরবানিও।
বাংলাদেশের পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য বহুদিন আগে থেকেই বন থেকে এই পশু ধরে এনে পালন করতেন। পাহাড়িদের কাছে এই প্রাণীটির মাংসের বেশ কদর রয়েছে। এখন এই কদর ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সমতল এলাকাতেও। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির সময়ে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রামের হাটগুলোয় এই প্রাণীটি দেখা যাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচার (আই.ইউ.সি.এন) ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের বন থেকে এই প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯৬৪ সালেও এই প্রাণীটি ছিল বন্য প্রাণীর তালিকাভুক্ত একটি প্রাণী। তবে এর আগে থেকেই পাহাড়ি বাসিন্দারা মাংসের জন্য এটি শিকার ও লালনপালনও করতেন।
এর নাম গয়াল। শিংগুলো খুব খাড়া। এটি বন্য গরুর একটি প্রজাতি। বাংলাদেশে এটি ‘চিটাগং বাইসন’ নামেও পরিচিত। আর ভারতে একে ডাকা হয় মিথুন নামে। গয়াল লবণাক্ত মাটি খেতে পছন্দ করে। এর উচ্চতা তিন-চার মিটার হয়। প্রতিটি গয়ালের গড় ওজন ৫০০-৭০০ কেজির বেশি হয়।
তবে, এমন গয়াল গরু রয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামে। সেখানকার আদর ডেইরি ফার্মের মালিক ইলিয়াছ হোসেন এবং সিরাজ ক্যাটেল ফার্মে লালনপালন করা হচ্ছে গয়াল।
কম চর্বিযুক্ত গোশতের কারণে দেশীয় গরুর চেয়ে গয়ালের ওজন দ্বিগুণ। মাংসও বেশ সুস্বাদু। বাজারে বিক্রি হওয়া গরু-মহিষের তুলনায় গয়ালের দাম একটু বেশি। একেকটি গয়াল ওজন ভেদে বিক্রি হচ্ছে। গরু-মহিষের চেয়ে বেশি গোশত হওয়ায় গয়ালের চাহিদা বাড়ছে।
খামারিরা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ১৪-১৫টি গয়াল লালনপালন করা হচ্ছে সেখানে। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়ানো হয় গয়ালকে। প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করাতে হয়। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রতিদিন দুর-দূরান্ত থেকে গয়াল দেখতে ফার্মে ভিড় করেন অনেকেই।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. নাহিদ হাসান বলেন, ‘চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নে সাড়ে ১৩ হাজার কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে। মজুদ আছে ১৪ হাজার পশু। গয়াল গরুও মানুষের নজর কাড়ছে। গয়ালের মাংসে কোলেস্টেরল কম হওয়ায় মানবদেহের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।’
বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। সাধারণত ১০-১১ মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। তারা বাঁচে ১৫-১৬ বছর। উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা পেলে হারিয়ে যাওয়া গয়াল হতে পারে গরুর বিকল্প ও দেশের সম্ভাবনাময় একটি উৎস।
মন্তব্য করুন