বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় ভুয়া ওয়ারেশ সেজে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের ‘ক’ তপশিলভুক্ত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা আদালতের রায়ে ব্যর্থ হয়েছে। আদালতের রায়ে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের ৮৩ বিঘা জমি রক্ষা পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আব্দুল মতিন এ রায় প্রদান করেন। জেলা প্রশাসকের ভিপি শাখা ও মামলার রায় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের ৪টি মৌজায় বিপুল পরিমাণ ‘ক’ তপশিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ছিল। ২০১৩ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর গ্রামের প্রদ্যুত মিত্রের ছেলে স্মৃতি মিত্র নামে এক ব্যক্তি ভুয়া ওয়ারেশ সেজে ওই জমি দাবি করে অর্পিত সম্পত্তি আইনে দুটি মামলা করেন। যার মামলা নং ৮১৮/১৩ ও ৮১৩/১৩।
মামলায় বাদী দাবি করেন, সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের ২০ নং বসুপুর, ২১ নং মহামায়া, ২২ নং বামুনপাড়া পদ্মবিলা ও ৪৮ নং চান্দুয়ালী মৌজায় তার পূর্ব পুরুষরা ২৪ দশমিক ৪৪ একর জমির মালিক ছিলেন যা পরবর্তীতে ভিপি তালিকাভুক্ত (‘ক’ তপশিল) হয়।
ওয়ারেশ প্রমাণে বাদী স্মৃতি মিত্র জাল কাগজপত্র ও ওয়ারেশ কায়েম সনদও সংগ্রহ করেন। এদিকে এলাকাবাসী আজিজুর রহমান সালাম জানান, ১৯৪৭ সালে রায়টের সময় বসুপুর, মহামায়া ও বামুনপাড়া পদ্মবিলা এলাকার অনেক হিন্দু তাদের জমিজমা ও অস্থাবর সম্পত্তি ফেলে ভারতে চলে যান। ফলে বসুপুর ও বামুনপাড়া পদ্মবিলা মৌজা হিসেবে বহাল থাকলেও সেখানে কোনো গ্রাম নেই। আগে এই দুইটি স্থানে গ্রাম ছিল। সেই জমিগুলো পরবর্তীতে ‘ক’ তপশিল হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
এদিকে ৭ বছর মামলা চলার পর ২০২০ সালে ঝিনাইদহের নিম্ন আদালতের বিচারক কে এম আলমগীর হোসেন বাদী স্মৃতি মিত্রের পক্ষে রায় দেন। এ নিয়ে সে সময় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনে হৈ চৈ পড়ে যায়। মামলায় হেরে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের নির্দেশে সরকার পক্ষ আবার আপিল করেন, যার মামলা নং ১৯/২০ ও ২০/২০।
জানা যায়, মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের পিতার নাম ও উল্লিখিত ৮৩ বিঘা জমির প্রকৃত মালিকের পিতার নাম এক হলেও দাদার নাম ছিল ভিন্ন। জমির প্রকৃত মালিকের দাদার নাম ছিল হেমন্ত কুমার এবং তাদের কোনো ওয়ারেশ বাংলাদেশে নেই। পক্ষান্তরে মামলার বাদীর দাদার নাম রঞ্জন কুমার মিত্র। আর এটাই আদালতে প্রমাণিত হওয়ার পর সরকারের ‘ক’ তপশিলভুক্ত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা ভেস্তে যায়। সরকার পক্ষের ভিপি কৌশলী অ্যাড. সুভাষ বিশ্বাস মিলন বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, সরকারের পক্ষে মামলাটি খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বাদীর দাদার নাম এক এবং প্রকৃত জমির মালিকের নাম ভিন্ন ভিন্ন। ফলে আদালত বিচক্ষণতার সঙ্গে রায় প্রদান করেন।
তিনি আরও জানান, এই মামলায় মধুহাটী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ জুয়েল ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনসহ ৫ জন সরকারের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. মীর সাখাওয়াত হোসন।
মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের পিতার নাম ও ভারতে থাকা জমির বর্তমান ওয়ারেশদের পিতার নামের মিল থাকলেও দাদার নাম ভিন্ন ভিন্ন। আমি সাক্ষ্য প্রদানের সময় এ কথায় বলেছি।
তিনি আরও জানান, বসুপুর, মহামায়া, বামুনপাড়া পদ্মবিলা ও চান্দুয়ালী মৌজায় এখন ১০/১২ লাখ টাকা করে জমির বিঘা। সেই হিসাবে ৮৩ বিঘা জমির দাম আনুমানিক ৯ কোটি টাকা হবে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন