আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টঙ দোকানের আয়ে চলছে রতন বেগমের জীবনযুদ্ধ

নিজের টঙ দোকানে বৃদ্ধা রতন বেগম। ছবি : কালবেলা
নিজের টঙ দোকানে বৃদ্ধা রতন বেগম। ছবি : কালবেলা

গ্রামীণ মেঠোপথের পাশে খোলা জায়গায় ৮টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে টঙ দোকান। চারপাশে নেই কোনো বেড়া। কয়েকটি চিপসের প্যাকেট, চানাচুর, চকোলেট, বিস্কুট আর কাপড় ধোয়ার পাউডার নিয়ে চলছে ব্যবসা। ব্যবসার এ সামান্য আয় দিয়েই কায়ক্লেশে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা রতন বেগম।

রতন বেগম উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের রামনগর এলাকার হাজারি বাড়ির মৃত আমছের আলির মেয়ে।

জানা গেছে, পারিবারিকভাবেই সিলেটের গোয়াইনঘাটের ভেতরগুল এলাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রতন বেগমের। ঠিকঠাকভাবেই চলছিল তার সংসার। এক কন্যা সন্তানের জননীও হয়ে ছিলেন তিনি, তবে সে সন্তানটি মারা যায়। মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

পরে উপয়ান্তর না দেখে তিনি বাবা আমছের আলির কাছে এসে আশ্রয় নেন। একসময় তার বাবাও মারা যান। পরে বেঁচে থাকার তাগিদে বাবার বাড়ির কাছেই গত ১৮ বছর ধরে যৎসামান্য পুঁজির এ নড়বড়ে টঙ দোকান দিয়েই চলছে তার জীবন।

রতন বেগমের টঙ দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ৮টি দুর্বল খুঁটির ওপর দাঁড়ানো টঙ দোকানটির চারপাশ খোলা, ওপরে নামমাত্র ছাউনি রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সামান্য বাতাসেই যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়বে ঘরটি। এ নড়বড়ে টঙ দোকানেই তিনি যৎসামান্য পুঁজি নিয়ে চিপসের প্যাকেট, চানাচুর, চকোলেট, বিস্কুট আর কাপড় ধোয়ার পাউডার বিক্রি করছেন।

আশপাশের বাড়িঘরের শিশু ও মহিলারা প্রতিদিনের ক্রেতা। প্রতিদিন সকালে মালপত্র দোকানে নিয়ে আসেন, সারা দিন বিক্রি শেষে থেকে যাওয়া মালপত্র সন্ধ্যায় বাড়ি নিয়ে যান। যৎসামান্য পুঁজির সামান্য আয় দিয়েই কোনোমতে চলছে তার অনিশ্চয়তায় মোড়ানো একলা সংসার।

রতন বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, এ কয়েকটা জিনিসপত্র দিয়ে দোকানদারি করে খুব সামান্য টাকাই পাই। এ আয় দিয়েই কোনোমতে বেঁচে আছি। এখন বয়স হয়ে গেছে, শরীরেও আগের মতো শক্তি পাই না। ধারে কাছে টিউবওয়েল না থাকায় দূর থেকে খাবার পানি আনতে কষ্ট হয়।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে দোকানের মালপত্র বাড়ি থেকে এনে আবার সন্ধ্যার বাড়ি নিয়ে যেতে আমার কষ্ট হয়। একটা দোকান তৈরি হলে আমার আর এ কষ্টটা হবে না। দোকানের আয় দিয়েই আমার একলা সংসার চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসহাক মিয়া বলেন, অনেক বছর ধরে তিনি এখানে সামান্য পুঁজি নিয়ে কিছু জিনিসপত্র দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তার স্বামী-সন্তান না থাকায় সে মূলত খারাপ অবস্থায় আছে। স্থানীয় লোকজন যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করে। তবে এসব সাহায্যও তার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, বৃদ্ধ মহিলাটি কারো কাছে হাত পাতে না, নিজের চেষ্টায় এ দোকান দিয়ে সামান্য আয়েই কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তার ভাইয়রাও তেমন খোঁজখবর নেন না। সারা দিনের টুকিটাকি বিক্রির আয় দিয়েই কোনোমতে চলছেন তিনি। যদি সরকারিভাবে বা কোনো সংগঠনের উদ্যোগে যদি তার দোকানঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয় তবে এ বৃদ্ধার অনেক উপকার হবে।

মালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, আমার ইউনিয়নের রামনগর এলাকার বৃদ্ধা রতন বেগমকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়। ভবিষ্যতেও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন এখনো চালু না হওয়ার কারণ

তাজরীনের আগুনে ঝলসে যাওয়া স্মৃতি, ১৩ বছর পরও শ্রমিকদের আর্তনাদ

নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বাড়বে: অর্থ উপদেষ্টা

কক্সবাজারে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত

মাছের ঘের থেকে কৃষকের মরদেহ উদ্ধার

শুটিং সেটে গুরুতর আহত, প্রযোজকের কথা ভাবলেন শ্রদ্ধা

আঁধারে শেষ ২০ বিঘা সবজি ক্ষেত

বানিয়ে নিন মচমচে ফুলকপির পকোড়া

মুক্ত আকাশে ফাঁদে আটকা ৯০টি শালিক পাখি

রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যা : অভিযোগ গঠনে শুনানির তারিখ নির্ধারণ

১০

প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইল রিয়াল মাদ্রিদ

১১

দুর্নীতি চাই এবং চাই না এর মধ্যে ফাঁক রয়েছে : দুদক চেয়ারম্যান

১২

বিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা জটিলতায় টেলর সুইফট

১৩

পুরো অ্যাশেজ থেকেই কি ছিটকে গেলেন অজি তারকা?

১৪

দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত, শেষ স্ট্যাটাস ভাইরাল

১৫

ঢাবি শিক্ষক কার্জনের জামিন

১৬

৩ বছর বিদেশে থেকেও ভোগ করেন বেতন-ভাতা

১৭

রহস্যময় বেলুনে লিথুনিয়ার বিমানবন্দর বন্ধ

১৮

বাউল শিল্পী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় এনসিপির নিন্দা

১৯

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরোয়া টোটকায় পা হবে নরম তুলতুলে

২০
X