কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা টইটং ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা নিরসন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে সুবিধার জন্য এলাকার নুনাছড়ি থেকে লেইগ্যাছড়া পর্যন্ত খাল খননের বাজেট দেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় এই খননকাজের বরাদ্দ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুক ট্রেডার্স মৌলভীবাজার।
বিএডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী এই খালের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩০ ফুট ও নিম্মে ১০ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফসলি জমির ওপর দিয়ে জোর করে প্রস্থ ৭০-৮০ ফুট খাল খনন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন জমির মালিকপক্ষ।
অবৈধভাবে কৃষি জমিতে খাল খননের কাজ বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়ে বিএডিসির সহকারী পরিচালক কক্সবাজার কাছে লিখিত অভিযোগ দিযেছেন ভুক্তভোগী। জেলা প্রশাসক (ডিসি) কক্সবাজার এবং পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা।
সরজমিনে দেখা যায়, এবিসি মহাসড়কের টইটং সীমান্ত ব্রিজ এলাকায় টইটং জুমপাড়া সড়কের নুনাছড়ি থেকে লেইগ্যাছড়া পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনর (বিএডিসি) অর্থায়নে ২ কিলোমিটার খাল খননের কাজ চলছে। পূর্বের ১০- ১৮ ফুটের খালটি ৭০-৮০ ফুট করতে স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে খালের দুই পাশে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দখলীয় কৃষিজমি। এক কিলোমিটারেরও বেশি খাল খনন সম্পন্ন হয়েছে। খননের মাটি রেখে খালের দুই পাশে তৈরি করা হয়েছে ১০ ফুটের দুটি রাস্তা। জমির মালিকদের থেকে আসা যে কোনো বাধা রুখতে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মোতায়েন রাখা হয়েছে এক দল গ্রামপুলিশ।
খাল খননের দৃশ্য দেখতে গিয়ে একাধিক স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা সেখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে তারা অনেকটা অসহায় হয়ে বলেছেন, খালটি ভরাট হয় যাওয়ায় অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে আশপাশের নিচু জমি প্লাবিত হয়। এতে ফসল ও চাষাবাদের ক্ষতি হয়।খালটি খনন করা হলে পানি প্রবাহিত হয়ে চলে যাবে। খাল খননে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। খাল খনন করলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে সুবিধা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের নোটিশ ও জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নকশায় খালের যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণের জমিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খাল খনন করছে। দুই পাশে অতিরিক্ত খনন করা জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। খননের এসব মাটি খালের দুপাশে ফসলি জমিতে রেখে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে খাল খননে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে জমির মালিকদের।
এদিকে সোমবার সকালে ফসল ও জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে পেকুয়া চৌমুহনীর একটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জমির মালিকরা। সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে থেকে লিখিত বক্তব্যে ভোক্তভোগী আবু সুফিয়ান মোস্তফা কামাল বলেন, বিএডিসির নির্দেশনা অমান্য করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজের প্রভাব বিস্তার করে আমাদের ফসলি জমি বিনষ্ট করে খাল খননের কাজ করছে। বিএডিসির নির্দেশনায় খাস জমিতে ওপরে ৩০ ফুট ও নিম্মে ১০ ফুট খাল খননের কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাব বিস্তার করে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের ব্যক্তিমালিকাধীন ফসলি জমির ওপর দিয়ে ৭০-৮০ ফুট প্রস্থের খাল খনন করছে। জমির মালিকেরা প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন তিনি। তার এই অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসী। তারা জমির ক্ষতিপূরণের জন্য বিএডিসির কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এলাকার কোনো কৃষকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে খাল খনন করা হচ্ছে না।বিএডিসির সিডিউল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। এ সম্পর্কে বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন। তবে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এসে পরিমাপ করে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির চকরিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি খাল খননের বাজেট দেওয়া হয়েছে। খননের কাজ পায় মুসক ট্রেডার্স মৌলভীবাজার। বিএডিসি’র নির্দেশনা আছে খালের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ওপরে ৩০ ফুট ও নিম্মে ১০ ফুট করা হবে। যার বাজেট দেওয়া হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৯ লাখ টাকা করে। যদি নির্দেশনা থেকে মাটি বেশি কাটা হয় তার ওপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণও বাড়বে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমি কেটে খাল খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই কিলোমিটার খাল খনন করতে ২০০ জনের জমির মাথা পড়বে। ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। খাল খননে কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু এখন একজন ব্যক্তি খাল খননে তার ব্যক্তি মালিকাধীন জমি কাটা হচ্ছে অভিযোগ তুলে কাজে বাধা দিয়েছে। অভিযোগকারীর জমিতে খাল খনন করা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সার্ভেয়ার দিয়ে তার জমি পরিমাপ করা হয়েছে। কিন্তু সার্ভেয়ারের দেওয়া তথ্যমতে অভিযোগকারীর জমিতে এখনো খাল খনন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টইটং ইউনিয়নে বিএডিসি ব্যক্তি মালিকাধীন কৃষিজমিতে খাল খনন করছে- এমন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এক ভুক্তভোগী। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করার নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে বিএডিসি ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন