প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। এদিন নুরুল হুদার পক্ষে তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা আজ নুরুল হুদার জামিন চেয়ে আবেদন করি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন। কি গ্রাউন্ডে তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে সে আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
এর আগে গতকাল এ মামলায় দু্ই দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুরুল হুদা। এরপর প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২২ জুন সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নুরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নুরুল হুদাকে গলায় জুতার মালা পরান জনতা। জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করতেও দেখা যায়। পরদিন ২৩ জুন নুরুল হুদাকে ৪ দিন ও ২৭ জুন ফের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২২ জুন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। হাবিউল আউয়াল রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে কেএম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিগত-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে গত ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আসামি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গ্রেপ্তার আসামি নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। ২০১৮ সালে পুনরায় সংসদ সদস্যদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় আসামি শেখ হাসিনা আসামি নুরুল হুদার মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।
অভিযোগে বলা হয়, এ নির্বাচনে বিএনপিসহ ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থীরা নমিনেশন পেপার সংগ্রহ করতে গেলে অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের বাধার সম্মুখীন হন। গায়েবি মামলা তৈরি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করে। কিন্তু নুরুল হুদার কাছে প্রতিকার চাইলেও কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর নুরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে এবং ৩০ ডিসেম্বর সকালে কিছু ডোট আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডারদের মাধ্যমে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে। বিএনপির ৬ সংসদ সদস্যকে বিজয়ী ঘোষণা করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে। এর মাধ্যমে আসামি নুরুল হুদা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে কোটি কোটি টাকার অর্থ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন