কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্যাংক বোর্ডের সহায়তায় অর্থপাচার নজিরবিহীন : বারকাতকে আদালত

ড. আবুল বারকাতকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা
ড. আবুল বারকাতকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা

দুনীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থপাচার করছে। এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।'

বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ মন্তব্য করেন। এদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে অ্যাননটেক্সের ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির মামলায় বারকাতকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ১১টা ৭ মিনিটের দিকে আদালতে তোলা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে বসেন তিনি। কাঠগড়ায় তাকে বেশ চিন্তিত দেখা যায়।

আদালতে তার পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ঋণ আবেদন করে এননটেক্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপ্রভা স্পিনিং মিলস। পরে তাদের আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন মেনে সুপ্রভা স্পিনিং মিলসকে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এখানে ড. আবুল বারকাত দায়িত্বের অবহেলা করেননি। তিনি কোনো নীতিমালাও ভঙ্গ করেননি।

তিনি আরও বলেন, এর আগে একই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করে কোনো দুর্নীতি হয়নি মর্মে ক্লিয়ারেন্স দেয়। এখন একই বিষয়ে নতুন করে মামলা করার বিষয়টি দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই না। তাই দুদক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে যে সব এলিগেশন এনেছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা তার (আবুল বারকাত) জামিন চাইছি।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় উনার কর্মচারীরা কোনো অপরাধ বা অনিয়ম করলে তার দায়িত্ব তাকেই (বারকাত) নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তার জামিনের বিরোধিতা করছি।

এ সময় বিচারক বলেন, সোনালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। এরপর থেকেই পাঁচ হাজার কোটি, দশ হাজার কোটি, বিশ হাজার কোটি, পঞ্চাশ হাজার কোটি, এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যায় বিভিন্ন দেশে। বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। যারা দুর্নীতি করেছিল তারা ওই কমিশনে গিয়ে নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেয়। ভেবেছিলাম এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এমন কিছু উদ্যাগ নেওয়া হবে। পাচার করা টাকা এই সরকার ফেরত এনে রাষ্ট্রের কাছে জমা দেবে কিন্তু সেটি হয়নি।

তিনি বলেন, এখন দুদকের মতো সংস্থার পক্ষে এত এত দুর্নীতি বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না। এছাড়া দুদক যেসব মামলা করে সেসব মামলায় শাস্তিও হয় কম। দুর্নীতি করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার, শাস্তি হয় পাঁচ বছরের।

এরপর আবুল বারকাত ও দুদক প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ করে বলেন, জনতা ব্যাংকের এলিগেশন আরও অনেক বড় থাকার কথা। তবে সব এলিগেশনের সঙ্গেই আপনি জড়িত এটি আমি বলছি না। আপনি ধৈর্য ধরেন। ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

এরপর আবুল বারাকাতের জামিন নামঞ্জুর করেন তিনি। একইসঙ্গে এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের শুনানির জন্য মামলাটি সিএমএম আদালতে প্রেরণের আদেশ দেন। পরে তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয় ।

এর আগে গত ১০ জুলাই রাতে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মম শাহজাহান মিরাজ পরদিন তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তবে মামলায় জামিন বা রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার সিএমএম আদালতের না থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. জুয়েল রানা। পরে দুদকের পক্ষ থেকে মামলা শুনানির জন্য মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে নেওয়া হয়।

জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুলাইয়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এই ১০ ব্যাংকে

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

লঘুচাপের আভাস, সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি / দগ্ধদের চিকিৎসায় ঢাকায় ভারতের মেডিকেল টিম

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ২৭৬ আউটসোর্সিং কর্মচারীর আলটিমেটাম 

অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে পারে বাংলাদেশ!

ব্রুনাইতে বিদ্যুৎস্পর্শে প্রাণ গেল ভোলার জামালের

জামিন নিতে গিয়ে শিবিরের তোপের মুখে গ্রেপ্তার আ.লীগের দুই নেতা

কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক

১০

শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে যান দাঁড়িয়ে, স্থানীয়রা ফ্রিতে বসে!

১১

যেভাবে খোঁজ মিলে পাইলটের, জানালেন শিক্ষক

১২

যারা জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেয় তাদের সঙ্গে ঐক্য অসম্ভব : নাছির উদ্দিন

১৩

স্যালুট দেওয়া সেই রিকশাচালকের হাতে ‘দাঁড়িপাল্লা’, চিত্রশিল্পীর ব্যাখ্যা

১৪

যে কোনো সংকট ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে : টুকু

১৫

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের স্থগিত পরীক্ষার নতুন সূচি ঘোষণা

১৬

প্রথম হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল উন্মোচন তুরস্কের

১৭

আমরা পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাব : নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

১৮

তাহলে ঢাকার বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বিসিসিআই!

১৯

নেসকোর প্রিপেইড মিটারে মাসিক ভাড়া, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

২০
X