রাজধানীর পল্টন থানার নাশকতার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৬৭ নেতাকর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজের আদালত মামলাটিতে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন জাতীয়তাবাদী মহিলার দলের সভাপতি আফরোজ আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া ইউং শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমুনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনজু, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ প্রমুখ।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি এই মামলায় তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। আজ আদালত এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে অভিযোগের দায় হতে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় দেরিতে হলেও আমরা সুবিচার পেয়েছি।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক থেকে ব্যান্ডপার্টি, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শোডাউন করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। এরপর নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে অপর দুটি মিছিল শোডাউন করে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে একই দিক হতে আসতে থাকে এবং সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৮-১০ হাজার জনের একটি মিছিল নিয়ে- ব্যান্ডপার্টিসহ ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শোডাউন করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। তারা নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোড বন্ধ করে মিছিল ও শোডাউন করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদেরকে রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও জন দুর্ভোগ সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করলে তারা পুলিশের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি বিএনপি অফিসে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভীসহ অন্য সিনিয়র নেতাদের জানানো হয় এবং পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আরও বলা হয়, তাদের অফিসের মাইকের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার বিষয়ে ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। পূর্বপরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আসামিরা অবৈধ জনতাবদ্ধে বিএনপির পার্টি অফিস থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে নয়পল্টনস্থ ভিআইপি রোডে হকস বে নামীয় গাড়ির শোরুমের উত্তর পাশে রাস্তায় পুলিশের একটি সরকারি ডাবল কেবিন পিকআপ পুড়িয়ে আনুমানিক মূল্য ৬০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। পুলিশের ওপর আক্রমণ করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে অতর্কিতে পুলিশকে আক্রমণ করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় আসামিরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে বারবার তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আসামিরা রাস্তার পাশে ডিউটিরত এসির (পেট্রোল-মতিঝিল) সরকারি মিটসুবিসি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির চারদিকে আগুন ধরে যায়। দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে গাড়িটি পুড়ে ভস্ম হয়। আগুনে পোড়া গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।
আসামিদের নিক্ষেপিত ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। আসামিরা ঘটনাটি ঘটিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে নাইটেঙ্গল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ করে প্রাইভেট কারসহ রাস্তায় আটকেপড়া আরও অনেক গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে পুলিশের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কার্য সম্পাদন করে। এ ঘটনায় পল্টন থানার উপপরিদর্শক মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন