দুদকের করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের তিন ধারায় মোট ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২১ জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর মঞ্জুরুল ইমামের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনা রত্নাসহ তিনজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে মিজানুরের অর্জিত ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সমস্ত সম্পদ (স্থাবর-অস্থাবর) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এদিন কারাগারে আটক ডিআইজি মিজানকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা মিজানের ছোটভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে মাহমুদুল হাসান আদালতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে আদালত রায় পড়া শুরু করেন। রায় শেষে মিজানসহ তিন আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পলাতক থাকা মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনা রত্না বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন।
রায়ের আদেশে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারার আসামি মো. মিজানুর রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, একই আইনের ২৭(১) ধারার ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২),৪(৩) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার মিজানুরকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় সোহেলিয়া আনার রত্না, মাহবুর রহমান ও মো. মাহামুদুল হাসান তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২),৪(৩) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার আসামি সোহেলিয়া আনার রত্না, মো. মাহবুবুর রহমান ও মো. মাহামুদুল হাসানের চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও সব আসামির দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ও গোপনকৃত সম্পদ তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার পাঁচ টাকার দ্বিগুন অর্থাৎ ছয় কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার দশ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সব সাজা একত্রে চলবে। আসামিদের হাজতবাস মূল দণ্ডাদেশ থেকে বিধি মোতাবেক বাদ যাবে।
২০১৯ সালের ২৪ জুন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ বাদী হয়ে ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দেন। গত ৫ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২১ জুন দিন ধার্য করেন। এর আগে ঘুষ নেওয়ার কারণে ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা হয়েও, আইনকানুন জেনেও ডিআইজি মিজান অপরাধকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। মানি লন্ডারিং করেছেন। আইন সবার জন্য সমান। এ রায় দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকবে। অপরাধীদের জন্য এ রায় এক ধরনের বার্তা।
মন্তব্য করুন