দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগ মোড়ে হামলা-ভাঙচুড়ের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন ওসি নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদী।
এরপর রাতেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও শাহবাগে ভিড় করেন জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘তাণ্ডব চালিয়েছে’ বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, সাঈদীর মরদেহ নিয়ে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালায়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ফজরের নামাজের পর তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল দখল করে নেয়। ফেসবুকে লাইভ দিয়ে সবাইকে এখানে চলে আসতে বলে। পরে বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সীমিত শক্তি প্রয়োগ করে।
এর আগে রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত সাঈদীকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওই রাতেই তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়।
কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকেল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং গাড়ি পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় এবং পৌঁছায় সকাল ১০টার দিকে। এরপর বেলা ১টার দিকে জানাজা শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর পর থেকে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।
জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন (দলটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য) হন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতের নায়েবে আমিরের পদে ছিলেন।
মন্তব্য করুন