নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ সোমবার (৩ জুলাই) থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি শুরু হচ্ছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু থাকলেও বেসরকারি কলেজগুলোতে মেধার চেয়ে টাকার মানদণ্ডে যারা এগিয়ে থাকতেন, তারাই ভর্তির সুযোগ পেতেন।
অটোমেশন পদ্ধতিতে মেধা তালিকা অনুসারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এতে মেধাবীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির অগ্রাধিকার পান। তাই এ পদ্ধতিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সেই সঙ্গে দেশের চিকিৎসা মান আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অটোমেশন নিয়ে বারংবার আপত্তি তুলেছিল বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। এরই মধ্যে তাদের এ আপত্তির কড়া সমালোচনা করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে অটোমেশন চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই সময় আপত্তি জানান বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকরা। এ নিয়ে মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা। এতে মালিকরা আরও এক বছর সময় চেয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালুর প্রস্তাব দেন। এতে সম্মত হয় সরকার। সে অনুযায়ী এবার সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও অটোমেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হচ্ছে। আজ ৩ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে ভর্তি প্রক্রিয়া।
অটোমেশনের মাধ্যমে আসন ফাঁকা থাকা ও পছন্দমতো শিক্ষার্থীরা কলেজ পাবে না ও অনেক শিক্ষার্থীকে ঢাকার বাইরে যেতে হবে উল্লেখ করে আবারও ভর্তি শুরুর আগে আপত্তি তুলেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। নির্ধারিত সময়ের পরও এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত ২০ জুন চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে উপপরিচালক (সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘অটোমেশন পদ্ধতিটি আমরা বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই বাস্তবায়ন করছি। প্রথমত, মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া। কিছু কিছু বিষয়ে কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করা যায় না। আমরা এমন মেডিকেল কলেজ ও দেখেছি যেখানে সামনের সিরিয়ালের শিক্ষার্থীর মধ্যে হুট করে অনেক পেছনের সিরিয়ালের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়েছে। টাকার জোরে ভর্তি হয়ে গেছে।
‘টাকার ক্ষমতায় যারা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তাদের বেশিরভাগই নৈতিকতার জায়গা হারিয়ে ফেলে। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসা দেবে, যা আমাদের দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পথ আরও সুগম করবে।’
ডা. মুজতাহিদ বলেন, ‘দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়ার দিকেও আমরা নজর দিয়েছি। এর আগে শিক্ষার্থীরা যেসব কলেজে ভর্তি হতে চায় সেসব কলেজে আলাদা আলাদা গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করতে হতো। এতে টাকা, সময়, শক্তির অপচয় হতো। এখন তারা অনলাইনেই তাদের পছন্দমতো কলেজের সিরিয়াল দেবে। সে অনুযায়ী তাদের ভর্তি নির্ধারণ হবে। এতে স্মার্ট বাংলাদেশের যে লক্ষ্য তাও বাস্তবায়নের অবদান রাখা হবে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের আপত্তির বিষয়ে উপপরিচালক বলেন, তারা এর আগে সময় চেয়েছেন, তা পেয়েছেনও। তারা আগে চিঠি দিয়েছিল। তবে যেসব কারণে দেখিয়ে অ্যাসোসিয়েশন আপত্তি জানাচ্ছে তার কোনো ধরনের ভিত্তি নেই। চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই সংবেদনশীল জায়গা। এখানে হুট করে এসে কেউ চিকিৎসক হয়ে যেতে পারে না। তাই এই সেক্টরের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।
ক্যাটাগরির নিচে থাকা কয়েকটি কলেজ আশঙ্কা করছে, তারা শিক্ষার্থী পাবে না, সে রকম কিছু হবে না। অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পর এর পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে সেটাও কর্তৃপক্ষ করবে বলে জানান তিনি।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অটোমেশন পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজের অর্থ নিয়ে যে ব্যবসা তা বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা।
সরকারিতে সুযোগ না পাওয়ায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজে মেধা তালিকায় ভর্তির বার্তা পেয়েছেন যশোরের শার্শা উপজেলার ডা. আপিল উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী হাফিজ আল আসাদ। তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী অটোমেশনের বিরোধিতা করছে, তারা ৪০ লাখ টাকা নিয়ে বসে আছে ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের এত টাকা নেই। অটোমেশন না হলে আমরা ভর্তিই হতে পারতাম না।
‘অটোমেশনের আগে যতই মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকুক, ডোনেশন (বাড়তি ফি) ছাড়া কোথাও ভর্তি হতে পারত না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অটোমেশন আসায় সেটার আর সুযোগ নেই।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এতদিন একযোগে সারা দেশে মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হতো। সরকারিতে ভর্তি শেষ হলে বাকিরা বেসরকারিতে ভর্তির সুযোগ পেতেন। নিয়ম অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করার কথা থাকলেও সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফির চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ টাকা বেশি নেওয়া হতো।
এ জন্য চলতি বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। এতে ছেলেদের জন্য ৬০টি এবং মেয়েরা ৬৬টি কলেজের যে কোনো একটিতে মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবে বলে অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী বেসরকারির ছয় হাজার ৫০০ আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে মেধা তালিকা অনুযায়ী ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বেসরকারিতে এবার ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
মন্তব্য করুন