ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোটার বিরুদ্ধে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মৌন সমাবেশ

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্যাম্পাসে মৌন সমাবেশ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্যাম্পাসে মৌন সমাবেশ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা

সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) কোটা বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পালিত হয়েছে। বেশকিছু দিন ধরে চলা এই আন্দোলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল না। তবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মৌন সমাবেশ করেছেন।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১০ মিনিটের মতো বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে এই মৌন সমাবেশ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কোনো বক্তব্য দেননি এবং সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ জুন ২০২৪ হাইকোর্ট ২০১৮ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর ফলে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সরকারি কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার উদ্রেক ঘটে। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান-

১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং নারীদের জন্য যথাক্রমে ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করেন। কেন না, মুক্তিযুদ্ধে তখন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে শহীদ হওয়াতে তাদের পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারায়। পাক হানাদার বাহিনী অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। অনেকে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারান, অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এমতাবস্থায়, তখন বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য জাতির জনকের ৩০ শতাংশ কোটাব্যবস্থা প্রদান করা সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ‘অনগ্রসর’ অবস্থা বিবেচনায় কোটা দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা বলা আছে)। তাছাড়াও তৎকালীন নারী শিক্ষায় এই জনপদ অনগ্রসর ছিল। যেসব নারী পড়াশোনা করেছেন তারাও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পড়ালেখা করতে পেরেছেন। সেজন্য তাদের জন্যও কোটা থাকা জরুরি ছিল।

পরে মাঝে কোটা সুবিধা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়াতে অনেক মুক্তিযোদ্ধার চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়। যার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পর্যন্ত কোটা সুবিধা প্রদান করা যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এসে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবারের নাতি-নাতনিদের পূর্বের অনগ্রসর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা লাগে নাই। এক্ষেত্রে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিবেচনা করে ওদের সুবিধার্থে এবং মেধার স্বার্থে পূর্বের কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা বাধ্যতামূলক।

২. ২০০৪ সালের ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী নারীদের সাক্ষরতার হার ছিল ৩১ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ছিল ৫১ শতাংশ। সেখানে বর্তমানে মেয়েদের সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। যেখানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮ শতাংশ (সূত্র : প্রথম আলো)। এ থেকে এটা বলা যায় যে, দেশে নারী শিক্ষায় ও যোগ্যতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নারীরা তাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। এমতাবস্থায়, ১০ শতাংশ নারী কোটা বজায় রাখা আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রতি অসম্মানজনক। এমনকি আমাদের মাঝে উপস্থিত নারীরা কেউই নারীদের জন্য এই বিশেষ কোটা সুবিধা চায় না। তাই নারী কোটাও সংস্কার করা উচিত।

৩. পূর্বে দেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বেশ কিছু প্রত্যন্ত জেলা ছিল যারা অনগ্রসর ছিল। যার জন্য ১০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়েছিল। বর্তমানে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে সারা দেশ এখন একসঙ্গে কানেক্টেড। তাছাড়াও টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলা বলতে কার্যত কিছু থাকছে না। তাই এখানেও ১০ শতাংশ কোটা রাখা ভিত্তিহীন।

৪. কোটা সংস্কারের পর বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত/ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে সে জায়গাগুলোতে মেধার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

৫. একটি বিশেষ কোটাকে যাতে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের ধাপে ধাপে সুবিধা ভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের সঠিক অবকাঠামো গঠন করার আবশ্যক।

৬. কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মেধাবীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসছে। তার মানে মেধা ও মননের দিক দিয়ে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। যার ফলে আগামীর বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে দেশের মেধাবীরা। সেজন্য মেধার সর্বাত্মক সুযোগ বজায় রাখা কাম্য। তাই মেধাই হোক সবচেয়ে বড় কোটা। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই, দেশের সর্বস্তরে কোটা সংস্কারবিষয়ক যেসব আন্দোলন হচ্ছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করছি এবং মহামান্য আদালতের প্রতি মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে অতি দ্রুত রায় প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটাবিরোধী আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে দুহাত কেটে যুবককে হত্যা

গুগলের এআই অ্যাপ চলবে ইন্টারনেট ছাড়াই

কার ফোনে আত্মসমর্পণ করেন মোদি, জানালেন রাহুল গান্ধী

ব্রিটিশ রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস

সিটি ব্যাংক ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

তিন হাজার প্রার্থীকে একই জিজ্ঞাসা, প্রশ্নটা কী?

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের পক্ষে অবস্থান নিল রাশিয়া

সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করার পক্ষে বিএনপি : সালাহউদ্দিন

রংপুরে সভা-সমাবেশ করতে নিতে হবে অনুমতি

বাজেট প্রতিক্রিয়া / বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ এমসিসিআইয়ের

১০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

১১

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যমূলক : বিএসপি চেয়ারম্যান 

১২

সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

১৩

প্রথম আইপিএল ট্রফি জিততে পাঞ্জাবের দরকার ১৯১ রান

১৪

আমেরিকার এক প্রতিবেদনে কুপোকাত আদানি

১৫

মোস্তফা জামাল হায়দারের সুস্থতায় দোয়া চাইলেন রাশেদ প্রধান

১৬

পুশ-ইন নিয়ে আবার চিঠি দেব দিল্লিকে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

কুমিল্লায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণ

১৮

লাখো ভক্তের সমাগমে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবস পালিত

১৯

ভুটানের বিপক্ষে কি দেখা যাবে হামজা-ফাহামিদুলকে?

২০
X