বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি গণহত্যা ও স্বৈরাচারিতার পক্ষে অবস্থান করার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের চার দাবি ও আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে তিনি এ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আমি চারুকলা অনুষদের নীল দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। উল্লেখ্য, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত একটি পত্র ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আমার অনুপস্থিতিতে আমার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে যা অফিস সহকারী মারফত অদ্য ১৯ আগস্ট আমার হস্তগত হয়েছে। ৪টি বিশেষ দাবি সংবলিত এই পত্রের ১ নং দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি গণহত্যা ও স্বৈরাচারীতার পক্ষে অবস্থান করায় চারুকলা অনুষদের ডিন-এর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ এবং পদত্যাগের দাবি কতটা যৌক্তিক তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে যাচাই সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমার পক্ষ থেকে আবেদন করার কোনো সুযোগ বর্তমান পরিস্থিতিতে নেই বিধায় আমি ওই অভিযোগ আমলে না নিয়েও আমাকে ডিনের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ১। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি গণহত্যা ও স্বৈরাচারিতার পক্ষে অবস্থান করায় চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসাথে, গণহত্যার সমর্থনে ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ অবস্থানের জন্য রবিউল ইসলাম - মৃৎশিল্প বিভাগ এবং সিদ্ধার্ত দে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ শিক্ষকদ্বয়ের শিক্ষকতা বাতিল করতে হবে।
১.১। ডিন নির্বাচনে অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো ডিন প্রার্থীর নির্বাচনে অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
১.২। এ ছাড়া উক্ত আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সকল শিক্ষককে অনুষদের শিক্ষার্থীদের কাছে এককভাবে লিখিত বিবৃতি দিতে হবে। উক্ত বিবৃতি এবং শিক্ষার্থীদের তৈরিকৃত রিপোর্ট এর ওপর ভিত্তি করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ছাত্র উপদেষ্টাদের লিখিত বিবৃতির সাথে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত পদের প্রেক্ষিতে কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন সে সম্পর্কে মৌখিক বিবৃতিও দিতে হবে।
২। শিক্ষাঙ্গনে সকল ধরনের দলীয় ব্যানারে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী নির্বিশেষে কেউ শিক্ষাঙ্গনের বাইরে রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে তার প্রভাব শিক্ষাঙ্গনে বিস্তার করার অপচেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের সাথে তদন্ত ও আলোচনা সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার রক্ষার্থে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অতিদ্রুত চারুকলা অনুষদ শিক্ষার্থী সংসদ গঠিত হবে। অনুষদের প্রশাসনিক যে কোনো সিদ্ধান্তে এই সংসদের সম্পৃকতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। গত ৫ আগস্ট চারুকলা প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য ভাঙতে বাধা দেওয়াতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যারা ভাস্কর্য ভাঙতে উদ্যত হয়েছিল তাদের পক্ষে অবস্থান করে অনুষদের ৩ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক। এছাড়াও শিক্ষক পরিচয়ধারী কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। উপস্থিত ঘটনায় অনুষদের একজন শিক্ষকের বক্তব্য গুলি করে মেরে ফেললে আমার কিছু করার থাকবে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন