জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে ভিসি নিয়োগের দাবি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন জবি সংস্কার আন্দোলনের বিভাগীয় প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সচিবালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎকার করেন এবং শিক্ষাসচিবকে তাদের দাবি জানান।
এসময় বিভাগীয় প্রতিনিধিরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়নি উপাচার্য নিয়োগ। জবি থেকে ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের টেকসই কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই, নতুন উপাচার্য নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশ্বিবদ্যালয়ের একাডেমি কার্যক্রমসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে ভিসি নিয়োগ হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের ভিসি নিয়োগে তালবাহানা করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৫৯ জন অধ্যাপক রয়েছেন, যার মধ্যে ৩৮ জন গ্রেড-১ অধ্যাপক। এর মধ্যে অনেক শিক্ষক অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। যারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। এসব স্বনামধন্য শিক্ষক উপাচার্য হওয়ার পরিপূর্ণ যোগ্যতা রাখেন। তাই দাবি হিসেবে আমরা আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাতের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা দ্রুত ভিসি নিয়োগ দেব। আমরা কাজ করছি। তবে আমাদের সব কিছু মাথায় রাখতে হয়। আমরা জবি থেকে ভিসি নিয়োগ দেব। তবে এর থেকে ভালো অপশন থাকলে ভেবে দেখব।
উল্লেখ্য, এর আগে আজ বেলা ১১টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের মধ্যে থেকে ভিসি নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা ‘দাবি মোদের একটাই জবি থেকে ভিসি চাই, অতিথি পাখির ঠিকানা জগন্নাথে হবে না, ঢাবি না, জবি, জবি-জবি, জবি থেকে ভিসি চাই, দিতে হবে দিতে হবে’ স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলোনি থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগের দাবি জানায়। তারা আরও জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যথেষ্ট যোগ্য। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দপ্তরে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, তাহলে কেন জগন্নাথে নিজেদের শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না।
এ সময় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বর্তমান সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুস্তফা হাসান বলেন, গত ১৯ বছর যাবত আমাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাণের দাবি হলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে ভিসি নিয়োগ। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে ভিসি না আসলে ক্যাম্পাসে আগুন জ্বলবে। এর দায়ভার কেউ নিবে না। এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আমার সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করছি। আমারা ক্লাস, অফিস বন্ধ করি নাই। আমরা রাস্তা ব্লক করি নাই। আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা এগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হব।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জুনায়েদ বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমাদের ভিসি আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে গত ১১ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সাদেকা হালিম পদত্যাগ করেন।
মন্তব্য করুন