বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিবিরকে ফাঁসাতে ছাত্রদল কর্মীর কাণ্ড

অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী শেখ ফাকাব্বির সিন। ছবি : সংগৃহীত
অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী শেখ ফাকাব্বির সিন। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্রশিবিরের ইমেজ সংকট তৈরি ও ফাঁসাতে আক্রমণ করার ‘নাটক সাজিয়ে’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আবাসিক হলে হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে।

রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪৩৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য সংগঠনের পদপ্রত্যাশী এক নেতার নির্দেশে ওই ছাত্রদলকর্মী এ অপচেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে ওই ছাত্রদল কর্মী ছাত্রশিবিরকে ‘খারাপভাবে’ উপস্থাপন করার জন্যই এ কাণ্ড ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রদল কর্মীর নাম শেখ ফাকাব্বির সিন। তিনি শাবিপ্রবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকায় একটি মেসে থাকেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম সরকারের সমর্থক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আবাসিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ‘হলের ওই কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী থাকেন। রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করেই ওই কক্ষে আসেন শেখ ফাকাব্বির সিন। তিনি কক্ষে আসলে পারস্পরিক কথাবার্তার পর তিনি চাকু দিয়ে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মারতে স্টেপ নেন। এক পর্যায়ে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বের হয়ে ওই ছাত্রদলকর্মীকে কক্ষে আটকিয়ে রাখেন।

পরে রাত সাড়ে ১০টায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন যে, ‘আমি সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। হলে মেসের টাকা নিতে গেলে শিবিরের ছেলেপেলে আমাকে কুপিয়ে জখম করে রুমে আটকিয়ে রেখেছে।’

এই পরিস্থিতি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে তাঁকে কক্ষ থেকে বের করেন। এবং ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মীকে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে উভয়পক্ষকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ কর হয়।

পরবর্তীতে রাত ২টা ৭ মিনিটে আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় শিবিরকে জড়িয়ে আমি যে পোস্ট করেছি তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং নির্যাতনও করা হয়নি। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমি পোস্টটি করেছি। আমি এটা ছাত্রশিবিরকে সবার সামনে খারাপভাবে উপস্থাপন করার জন্য করেছি। অতএব আমার পোস্টটি আমি তুলে নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে ৪৩৬ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম জানান, ‘গতকাল রাতে কেউ একজন নক না করে আমাদের রুমে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর সে অভদ্র ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলে। তার পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারি সে আমাদের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের জুনিয়র। তাকে বলি কারোর রুমে প্রবেশ করলে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়। এ ছাড়া হাফ প্যান্ট পরে রুমে প্রবেশ করতে নিষেধ করি উত্তরে তখন সে আমাকে গালি দিয়ে বলে ‘আমি এভাবেই কথা বলি তুই যা পারিস করিস।’

তিনি বলেন, ‘এরপর তার সোয়েটারের ভেতরের পকেট থেকে ধারালো চাকু বের করে আমার গলায় ধরে এবং বলে তুই আমাকে চিনস, আমি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তখন নিজেকে রক্ষার জন্য তাকে ধাক্কা দেই এবং বের হয়ে বাইরে থেকে রুম আটকিয়ে দেই। এরপর প্রক্টর স্যারকে জানালে গার্ডরা এসে বাকিদের উদ্ধার করেন। আমিরুল ইসলাম আরও জানান, আমার রুমমেট সুষম শাহার কাছে তার মাদক সেবনের ভিডিও থাকায় এটি ডিলিট করতে মূলত সে হলে আসে।’

একই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘আমিরুল নিজেকে বাঁচাতে বের হয়ে গেলে রুমে আমিসহ আরমান ও রাতিন আটকা পড়ে যায়। তখন ফাকাব্বির আমার গলার কাছে চাকু ধরে এবং ইউটিউব থেকে তার নিজের এলাকায় করা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিডিও দেখায়। এরপর সে নাঈম সরকার (ছাত্রদল নেতা) নামে একজনকে কল দেয় এবং বলে ভাই আমাকে শিবিরের পোলাপানরা ধরে আটকায় রাখছে। আপনি না আসলে আমাকে বলেন, ‘আমি নিজের স্টাইলে তিনজনকে ফেলে দিয়ে বের হয়ে যাব।’ এরপর আমরা বের হয়ে গেলে সে নিজের উরুতে ছুরির আঁচড় দিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয় এবং ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে স্যাররা এসে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘গতকাল রাতে ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য মূলত কাজটি করা হয়েছে। ওই কক্ষে আমাদের কোনো কর্মীও নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হলেও আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি এবং সঠিক তদন্তের বিষয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। যে ছেলে পোস্টটি করেছেন তার পূর্বের ফেসবুক পোস্টগুলো দেখে বোঝা যায় সে ছাত্রদলকর্মী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের আশা করি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা নাঈম সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘ছেলেটা আমার পূর্ব পরিচিত। সে আমাকে কল দিয়ে বলছে ভাই শিবিরের পোলাপান আমাকে মারছে ও আটকিয়ে রাখছে। উত্তরে আমি বললাম, আমিতো সিলেটে নেই, ঢাকা চলে আসছি। যেহেতু আটকিয়ে রাখছে তোকে উদ্ধার করার প্রয়োজন। তার বন্ধুরা যাতে দেখতে পারে এজন্য তাকে ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে বলি। তা ছাড়া আর কিছুই না।’

এ বিষয়ে ছাত্রদল কর্মী শেখ ফাকাব্বির সিনের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি এবং প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসি। ছাত্রশিবিরের জড়িতের বিষয়ে ছেলেটি যে অভিযোগ করেছে সেই অভিযোগ সে তুলে নিয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের কাজ চলছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

১০

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১১

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১২

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১৩

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৪

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৫

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৬

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৭

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৮

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৯

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

২০
X