রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রিসাইডিং অফিসার ছাত্রলীগ সহসভাপতি

ছাত্রদলের কাউন্সিলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাবির ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন (লাল দাগ চিহ্নিত)। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্রদলের কাউন্সিলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাবির ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন (লাল দাগ চিহ্নিত)। ছবি : সংগৃহীত

পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত রোববার (২০ এপ্রিল)। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী। সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে রাবি শাখার কয়েকজন নেতাকর্মীও কাজ করেছেন।

তবে কাউন্সিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক ছাত্রলীগ নেতার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, শাখা ছাত্রদলের এক নেতার আশ্রয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ আছে এ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

হঠাৎ দল বদলকারী ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপত। তিনি রাজশাহীর কাটাখালি থানার হরিয়ান এলাকার মো. শহিদুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুসহ একাধিক নেতার সঙ্গে সখ্য ছিল শাহাদাতের। ছাত্রলীগের সময়ে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর আগে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা জেবর আলীর নির্বাচনী প্রচারণাতেও সম্মুখসারিতে থেকেছেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ছবিতেও দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাতকে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ফেসবুক থেকে পুরোনো পোস্ট সরিয়ে নেন শাহাদাত। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠুর আশ্রয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী কালবেলাকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর সরাসরি হামলা করা এবং পোস্টেড একজন ছাত্রলীগ নেতা কীভাবে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করে তা বুঝতে পারছি না। সেখানে সে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও ছবি তুলেছেন। শাহাদাত মাহমুদুল মিঠুর সঙ্গে পাবনা গিয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সে মিঠুর আশ্রয়ে আছে। ছাত্রদলে কোনোক্রমেই ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করি। বিভিন্ন সময়ে যেন ছাত্রলীগকে চাঁদা না দিতে হয় তাই তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেছি। তাছাড়া আমি ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলাম না। তবে তাদের সঙ্গে আমার কোচিং সেন্টার পরিচালনার জন্য মেলামেশা ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমার আত্মীয়, তাই তার নির্বাচনে সহযোগিতা করেছি।

তবে ছাত্রলীগের পদে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও সৈয়দ আমির আলী হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে শাহাদাত হোসেনের নাম খুঁজে পেয়েছে কালবেলা। এ ছাড়া ওই হলের ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী তার পদের বিষয়ে কালবেলাকে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমানে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন ও দল পাল্টানোর বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, আমি আগে থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে ব্যবসায়িক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলতে হতো। আমি পাবনায় একটা কাজে গিয়ে শাখা ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দায়িত্ব পালন করেছি।

ছাত্রলীগ নেতাকে আশ্রয় এবং দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, আমি রাজনীতি করি। ক্যাম্পাসে অনেকেই এসে আমার সঙ্গে ছবি তোলে। আর পাবনার ঘটনায় শাহাদাত গিয়েছিল তার ব্যক্তিগত কাজে। সে আমাদের সফরসঙ্গী বা দলের অংশ হিসেবে না। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক হিসেবে পরিচয় দিলে তার সঙ্গে কথা হয়। মঞ্চে নাসির ভাইয়ের সঙ্গে অনেকেই ছবি তুলেছে। তাই হয়তো শাহাদাতও ছবি তুলেছে।

তবে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করা একাধিক নেতা কালবেলাকে জানান, শাহাদাত হোসেন সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, শাহাদাত যে ছেলেটি নিয়ে কথা আসছে তিনি ওই কাউন্সিল-২০২৫ এর সফরসঙ্গী না। তিনি পাবনা থাকায় রাবি যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠুর ক্যাম্পাসের ছোট ভাই হিসেবে দেখা করতে এসে তার পাশে বসে। আমাদের ব্যস্ততার মাঝে কোনো এক সময় সে ছবি তুলে ফেলে। সে স্টেজে ছিল না। ছবি তুলেই নেমে গেছে।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরও বলেন, আমি এসব জানার পর মিঠুর কাছে জবাব চাই। জবাবে মিঠু বলে শাহাদাত আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়ের করা নাশকতা মামলার ১৫ নম্বর আসামি। এ ছাড়াও ছেলেটি নলখালা ইউনিয়ন কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক। এজন্য পাবনা থাকায় সে দেখা করতে চাইলে তাকে দেখা করতে বলি।

তিনি আরও বলেন, সে উপচেপড়া ভিড়ের সুযোগে আমাদের না জানিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে ফেলছে। আমাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা, বিগত ১৭ বছর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ দ্বারা আমাদের শরীরে রক্ত ঝরেছে। সে সঙ্গে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের দ্বারা শহীদ হয়েছেন। তাদের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৬

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

শীতে কাঁপছে তেঁতুলিয়া, তাপমাত্রা নেমে ১১ ডিগ্রিতে

৬ ডিসেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

৬ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

নতুন ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শনিবার

নতুন প্রজন্ম শান্তিপূর্ণ রাজনীতি প্রত্যাশা করে : ইশরাক

ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা আজ

‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের আপনজন’

১০

২০ বছরের ব্যবসা বাঁচাতে ছাড়লেন চেয়ারম্যান পদ

১১

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

১২

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল?

১৩

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

১৪

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

১৫

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

১৬

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

১৭

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

১৮

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

১৯

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

২০
X