খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) প্রায় আড়াই মাস পর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। রোববারের মতো সোমবারও (৫ এপ্রিল) তারা কর্মবিরতি পালন করছেন।
শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে সাত কার্যদিবসের আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এমন অবস্থায় কুয়েটে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হযরত আলী বলেন, কুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা শুধু কুয়েটে সীমাবদ্ধ ছিল না, পুরো ন্যাশন ওয়ার্ল্ডের ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা জড়িয়ে গেছে। আমি চুয়েটে ছিলাম, সেখানেও ছাত্রছাত্রীরা অনশনে বসে ছিল। এখন কয়েক দিনের আলোচনায় আমি যেটা বুঝতে পারলাম ঘটনা অনেক সিরিয়াস।
তিনি আরও বলেন, উভয়পক্ষেরই ক্ষোভ ও দাবি রয়েছে। ঘটনার গভীরতা অনেক। তবে এখন ক্লাসে ফেরাই প্রধান অগ্রাধিকার। এর জন্য যা কিছু ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন, উভয়পক্ষকেই তা দিতে হবে।
বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা ক্ষমা চেয়ে ভিসির মাধ্যমে শিক্ষকদের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হামলার ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। আমাদের ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারি সেই পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখিত দিয়েছি। তারা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
এদিকে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন জানান, সভায় ৫ দফা দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকরা সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবে। গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ইউজিসি প্রতিনিধিদল যে পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছেন তাতে শিক্ষকরা উপেক্ষিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ব্যক্তিসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার পরিবেশ তৈরি করে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকরা প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। শিক্ষকদের সাইবার বুলিং, অবমাননা বা গুজবের সঙ্গে জড়িত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ৫ দফার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েটবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্তদের শনাক্তপূর্বক সেগুলো বন্ধ এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। ওই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন