বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৫ মে) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে। পরে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, মেডিকেল, লাইব্রেরি, পাঠদান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ব্যতীত সকল প্রশাসনিক দপ্তরের তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিলে তিনিই পুনরায় কার্যক্রম শুরু করবেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে ৪ দফা দাবি দেওয়া হয়। দাবি আদায় না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে নেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম ওয়াহিদুর রহমান, শহিদল ইসলাম শাহেদ, মাইনুল ইসলাম, সাংবাদিকতা বিভাগের আজমাইন সাকিব, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, মার্কেটিং বিভাগের এম ডি শিহাব, বাংলা বিভাগের আশিকুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের রবিউল ইসলাম,ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ইংরেজি বিভাগের রাকিন খান বলেন, বিভিন্ন বিতর্ক ও নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শূচিতা শরমিন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করেছে। একজন অভিভাবক কি করে যৌক্তিক আন্দোলন দমানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে? আমরা তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন চাই না। আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।
মার্কেটিং বিভাগের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এম. ডি. সিহাব বলেন, উপাচার্য ড. শূচিতা শরমিনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব নীতিনির্ধারণে তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও জিডি করেছেন, যা প্রশাসনের দমন-পীড়নমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুক্ত চিন্তা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সুশাসনের পরিপন্থি। আমাদের এখন একটাই দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বিপ্লব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ না করে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত। এ ছাড়া উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও অপেশাদার মনোভাবের কারণে আমাদের বোন জেবুন্নেসা হক জিমি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। তিনি স্বসম্মানে পদত্যাগ না করলে আমাদের আরও বড় ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, চলমান আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন। উপাচার্য দীর্ঘ ৯ মাস দায়িত্ব পালন করার পরেও ন্যূনতম কোনো উন্নয়ন বা শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এর মাধ্যমে বোঝা যায় তিনি একজন অযোগ্য উপাচার্য। আমরা এ অযোগ্য উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।
এদিকে রোববার (৪ মে) শিক্ষার্থী ও উপাচার্য পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি ঘোষণা করেন।
গত ৩০ নভেম্বরও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন থেকে সাময়িক বিরত হন একদল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশ করে গেট ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান সাক্ষী হিসেবে উপাচার্য ড. শূচিতা শরমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ হিসেবে উল্লেখ করে সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে ১৩ এপ্রিল অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন