দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তোলপাড় চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ গেস্ট হাউসের ইন্টেরিয়র কাজের আরএফকিউ টেন্ডারকে কেন্দ্র করে এ অভিযোগ উঠে এসেছে, যার সঙ্গে আরএফকিউ কমিটি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়ার্কস শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি রুমের জন্য আলাদা ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকার আরএফকিউ টেন্ডার প্রদান করা হয়, যার ভ্যাট বাদে প্রকৃত মূল্য ২৩ লাখ টাকা। কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ।
অভিযোগ রয়েছে, কাজ শেষ না হতেই আরএফকিউ কমিটি বিল অনুমোদন করে এবং উপাচার্য নিজেই ২৩ লাখ টাকার চেক ঢাকায় নিয়ে যান। ব্যাংকে চেক ভাঙাতে ব্যর্থ হয়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারকে ৪.৬৪ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন।
এ ছাড়াও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ই-জিপি নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী ৬ লাখ টাকার বেশি টেন্ডার ই-জিপি এর মাধ্যমে দিতে হয়, কিন্তু এখানে একই প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ভেঙে আরএফকিউ দিয়ে ৩০ লাখ টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে এই অনিয়ম করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের প্রপ্রাইটর অনুকূল বালা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলামের মধ্যে একাধিক কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক রেকর্ডে তরিকুল বলেন, ‘ভ্যাট বাদে মোট বিল ২৩ লাখ টাকা। আপনি কত পাবেন?’ জবাবে অনুকূল জানান, ‘৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা।’
অন্য একটি রেকর্ডে শোনা যায়, উপাচার্য ৪ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন, যা অনুকূল বালা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে উপাচার্যের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাশে দিইনি, ব্যাংকের চেকে দিয়েছি— প্রমাণ আছে।’ আরও বলেন, ‘আমি যদি ফেঁসে যাই, দুদকে আত্মসমর্পণ করব। তখন শুধু আমি না, ভিসিসহ অনেকেই ফাঁসবে। আমি ঘুষ দিছি আমার সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিনের জেল হবে, কিন্তু ভিসি তো ফেঁসে যাবে। কেন ফাঁসবে আপনিও জানেন।’
রেকর্ডিং সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের প্রপ্রাইটর অনুকূল বালার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন এবং জানান, পরে বিস্তারিত খুলে বলবেন।
আরএফকিউ কমিটির সদস্য সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার তরিকুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অফিস সূত্রে জানা যায়, তিনি তাৎক্ষণিক তিন দিনের ছুটিতে গেছেন।
আরএফকিউ কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান বাহাদুর কালবেলাকে বলেন, ‘বড় কোনো কাজকে ছোট ছোট ভাগে আরএফকিউর মাধ্যমে দেওয়া যায় এবং সেটি করা হয়েছে।’
চেক অনুমোদনের বিষয়ে তিনি জানান, ‘কাজ চলাকালে আংশিক টাকা পরিশোধ করা আগে থেকেই প্রচলিত আছে।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. এনামউল্যার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি পরে ফোন দেওয়ার কথা জানান। পরবর্তীতে তাকে আবার ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আরএফকিউ প্রক্রিয়ার জবাবদিহিতা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে।
মন্তব্য করুন