সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ, অফিসের চাপ, সংসারের হিসাব-নিকাশ, তার ওপর মানসিক টেনশন—সব মিলিয়ে দিন শেষে শরীর যখন একেবারে অবসাদে ভেঙে পড়ে, তখন একমাত্র কামনা থাকে আরামদায়ক ঘুম। এ সময়ে অনেকে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ার অভ্যাস মেনে চলেন। বহুদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার ঘরে ঘরে এমন প্রথা চালু আছে। দুধকে ঘুম আনার পানীয় বলেও অনেকে ডাকেন। কিন্তু সত্যিই কি দুধ ঘুমের জন্য উপকারী? নাকি এটি কেবলই একটি কুসংস্কার?
আয়ুর্বেদ থেকে আধুনিক বিজ্ঞান—সব জায়গাতেই রাতে দুধ খাওয়ার সুফল নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, শোবার আগে দুধ খাওয়ার প্রভাব শুধু ঘুমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শরীরের ভেতরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, রাতের এক গ্লাস গরম দুধ শরীরে আসলে কী করে।
মন শান্ত করে, ঘুম আনে
দুধে আছে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড। এটি শরীরে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলো মস্তিষ্ককে শান্ত করে, মনকে প্রশান্ত করে আর গভীর ঘুম নিশ্চিত করে। তাই দুধকে প্রাকৃতিক স্লিপিং ড্রিংকও বলা হয়।
হাড় ও দাঁতের যত্নে
দুধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলো হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য। রাতে খেলে ঘুমের সময় শরীর সহজে এসব পুষ্টি শোষণ করে নেয়, ফলে হাড় মজবুত হয়, দাঁতও থাকে সুস্থ।
হজমে সহায়তা
গরম দুধ হজম প্রক্রিয়াকে আরাম দেয়। আয়ুর্বেদ মতে, এটি শরীরের পিত্ত ও বাত দোষ কমায়, যার ফলে অম্লতা, বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
দুধে আছে প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২ ও নানা মিনারেল, যা শরীরকে শক্তি জোগায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে। দুধে যদি হলুদ মিশিয়ে খাওয়া হয়, তবে প্রদাহ কমে যায়, শরীর আরও বেশি রোগ প্রতিরোধী হয়। আর যদি মধু মেশানো হয়, তবে তা স্নায়ুকে শান্ত করে, মন রিল্যাক্স হয়। এলাচ বা জায়ফল দিয়েও অনেকে দুধ খান, যা স্বাদে বাড়তি মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে।
কারা রাতে দুধ এড়িয়ে চলবেন?
সবাই যে রাতে দুধ খেতে পারবেন, তা নয়। যাদের ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা আছে, বারবার অ্যাসিডিটি বা অম্লতায় ভোগেন কিংবা চিকিৎসক যাদের দুধ না খেতে বলেছেন, তাদের জন্য রাতে দুধ খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শেষকথা
রাতে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়া মানেই শুধু গভীর ঘুম নয়, বরং শরীর ও মনের সর্বাঙ্গীণ যত্ন। তবে এটা মনে রাখা জরুরি, দুধের উপকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে কার শরীর কেমন এবং কোন অবস্থায় আছে তার ওপর। তাই কারো জন্য এটি উপকারী হলেও, কারো জন্য আবার সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
সূত্র : হেল্থ লাইন
মন্তব্য করুন