যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যবিপ্রবিতে অধ্যাপক পদে ‘পছন্দের প্রার্থীকে’ নিয়োগ দিতে নতুন নীতিমালা!  

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি)। ছবি : কালবেলা
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি)। ছবি : কালবেলা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অধ্যাপক পদে ‘পছন্দের প্রার্থীকে’ নিয়োগ দিতে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা ‘পছন্দের প্রার্থীকে’ নিয়োগ দিতে নিয়ম ভাঙার ‘নজিরবিহীন নজির’ বলে দাবি করছেন।

অভিযোগকারীদের দাবি, একাধিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পছন্দের প্রার্থীর জন্য নতুন করে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং এই নীতিমালার আলোকে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে বাদ দিয়ে একমাত্র প্রার্থীকে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এই নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য প্রথম ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ইউজিসির অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার যোগ্যতা পূরণ করে আবেদন করেন খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ ও ড. সাইদুজ্জামান। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান না করে পরবর্তীতে চলতি বছরের ২২ মার্চ ও ২ জুন আরও দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম ৫ বছর সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।

এরই মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি নতুন নীতিমালাও প্রণয়ন করে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। আর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ ও ড. সাইদুজ্জামানকে ‘আটকাতে’ তড়িঘড়ি করে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের একমাত্র যোগ্যপ্রার্থী হন নতুন প্রার্থী সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক। তিনি এর আগে আবেদন করেননি।

অভিযোগকারীদের দাবি, ‘পছন্দের প্রার্থী’ সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুককে নিয়োগ দিতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অপর দুই প্রার্থী ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ ও ড. সাইদুজ্জামানের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা পূর্ণ হতে আড়াই থেকে তিন মাস বাকি। এজন্যই পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্য হলেও তা বাতিল করে তড়িঘড়ি নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এদিকে, নতুন নীতিমালার বেড়াজালে দুই প্রার্থীকে আটকানোর এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে যদি ভিন্ন আঙ্গিকে একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, তা আইনত বৈধ নয়। এছাড়া একাধিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বিদ্যমান থাকলে কোন একটিকে অনুসরণও আইনগতভাবে বৈধ হতে পারে না। আর শিক্ষক নীতিমালা বাতিল না হলে পূর্বের ভ্যন্তরীণ প্রার্থী, যাদের ইন্টারভিউ কার্ড প্রদান করা হয়েছে তাদের কার্ড না দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে আইনকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এই সাজানো নিয়মে আগামীকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এই নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এছাড়া যবিপ্রবির অর্গানোগ্রাম (টিওঅ্যান্ডই) অনুমোদন ছাড়াই ‘আইন লঙ্ঘন করে’ এইসব নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে বলেও অভিযোগকারীদের দাবি। আর এই নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগেই পূর্ববর্তী দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন দুদকের মামলায় হাজতবাসও করেছেন।

তবে বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করেছেন যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব নীতিমালা করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যাপক পদে আবেদনের জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম ৫ বছর সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই নীতিমালা কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়, সবার জন্য। ড. ওমর ফারুক এখানে (যবিপ্রবি) প্রায় ৮ বছর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করছেন। আর বাকী দু’জনের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে আড়াই-তিন মাস বাকী রয়েছে।

যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ দাবি করেন, এই নিয়োগে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অনৈতিকতা নেই। যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ বোর্ড হচ্ছে।

এদিকে, যবিপ্রবি’র পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে যাওয়া সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুকের যবিপ্রবিতে চাকরি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চাকরি করেছেন। এরই মধ্যে ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব মন্টপেলিয়ার থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। একদিকে, বেসরকারি চাকরি এবং পিএইচডি সার্টিফিকেটের ইকুইভেলেন্ট না করে কোনো ধরনের শিক্ষকতা ছাড়াই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান। দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর শিক্ষকতা করেই তিনি ২০১৭ সালে যবিপ্রবিতে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান। তার ওই বেসরকারি চাকরির সময় গণনা ও পিএইচডি নিয়ে যবিপ্রবিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক জানান, তিনি বারডেম থেকে স্ববেতনে ছুটি নিয়ে ফ্রান্সে পিএইচডি করেছেন। আর পূর্ববর্তী ওই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি যবিপ্রবিতে চাকরি পেয়েছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কম শিক্ষকই ‘ইকুইভেলেন্ট সনদ’ দিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ বলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসন তার সনদ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরি দিয়েছেন। বর্তমান প্রশাসন সেখান থেকেই বিষয়টি বিবেচনা করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পেনশন নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বড় সুখবর

অস্ত্র মামলায় যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড

চাকসুতে ১০ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা

চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি করতে নতুন ল্যান্ডফিল্ড কেনার উদ্যোগ চসিকের

রাত নামলেই লুট হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর বেড়িবাঁধের ব্লক

পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা গিরীধারী লালের পরলোকগমন

‘বাংলাদেশ-চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে’

পাল্টে গেল সমীকরণ, এখন যেভাবে সুপার ফোরে যেতে পারে বাংলাদেশ

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে

ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতালের অনন্য অর্জন

১০

বিসিএস পরীক্ষা / সেনানিবাস এলাকায় প্রবেশে বিশেষ নির্দেশনা

১১

বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ

১২

কক্সবাজারে ৩১৭ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

১৩

জুলাই ঘোষণার আইনি ভিত্তি দিয়েই আগামী নির্বাচন হতে হবে : গোলাম পরওয়ার 

১৪

সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে গবেষণা ও উদ্ভাবনী সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে

১৫

এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে, জানাল শিক্ষা বোর্ড

১৬

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে হবে আগামীর বাংলাদেশ : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

১৭

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতেই হবে : ফয়জুল করীম

১৮

শেষ ওভারের ঝড়ে আফগানদের বড় সংগ্রহ, শঙ্কায় বাংলাদেশ

১৯

বরিশালের ৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

২০
X