দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) হল সংসদ নির্বাচন। ক্যাম্পাসজুড়ে এরই মধ্যে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্যানেলগুলো প্রকাশ করা হয়। এতে বড় দলগুলোর পাশাপাশি অরাজনৈতিক ও নতুন সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ নির্বাচনী পরিবেশকে বহুমাত্রিক করেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদলের প্যানেল :
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন উপস্থিত থেকে প্যানেল ঘোষণা করেন। তাদের প্যানেলে ভিপি পদে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, জিএস পদে মো. শাফায়াত হোসেন এবং এজিএস পদে আইয়ুবুর রহমান তৌফিক মনোনীত হয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ :
ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণার কিছুক্ষণ পর ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এতে ভিপি পদে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য ইব্রাহিম হোসেন রনি, জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব এবং এজিএস পদে সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্যানেলে ধর্মীয় বৈচিত্র্য রক্ষার্থে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ :
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে ভিপি পদে আব্দুর রহমান রবিন, জিএস পদে আব্দুর রহমান এবং এজিএস পদে আমিনুল ইসলাম রাকিব মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের দাবি, তারা শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চান।
একাধিক বাম সংগঠনের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ :
বেশ কয়েকটি বাম সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘোষণা করেছে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামের প্যানেল। এতে ভিপি পদে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, জিএস পদে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা এবং এজিএস পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জাকিরুল ইসলাম মনোনীত হয়েছেন। বাম সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, তাদের মূল প্রতিশ্রুতি হলো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন :
জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন নামের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, জিএস পদে একই সংগঠন থেকে সদ্য বহিষ্কৃত আর এম রশীদুল হক দিনার এবং এজিএস পদে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট :
স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড), ছাত্র ফেডারেশনসহ স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ এ ভিপি পদে আবির বিন জাবেদ, জিএস পদে চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবন এবং এজিএস পদে পলাশ দে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের দাবি, তারা প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে বিকল্প ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেইঞ্জ’ :
ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের প্যানেলের নাম দিয়েছে ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেইঞ্জ’। এতে ভিপি পদে সংগঠনের শাখা আহ্বায়ক তামজীদ উদ্দিন, জিএস পদে ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমী এবং এজিএস পদে সংগঠনের সদস্য সচিব রোমান রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাদের অঙ্গীকার, দ্রুত সংস্কার ও শিক্ষার্থীবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন।
অরাজনৈতিক ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ :
অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলে ভিপি পদে তাওসিফ মুত্তাকি চৌধুরী, জিএস পদে সাজ্জাদ হোসেন এবং এজিএস পদে সাইদ মোহাম্মদ মুশফিক হাসান মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের বক্তব্য, তারা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও মৌলিক সমস্যা সমাধানকেই অগ্রাধিকার দেবেন।
‘দ্রোহ পর্ষদ’ প্যানেল :
ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট যৌথভাবে ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ঋজুলক্ষ্মী অবরোধ, জিএস পদে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু এবং এজিএস পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির।
‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ :
সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ভিপি পদে ফরহাদুল ইসলাম, জিএস পদে ইয়াসিন উদ্দিন সাকিব এবং এজিএস পদে শহীদুল ইসলাম শাহেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
২৩২ পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন :
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩২ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ১৬২ জন প্রার্থী। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৫২৮ জন। তবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪২৯ জন। আর ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ২০৬টি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৬৩৪ জন। এদের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৫০২ জন প্রার্থী।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত চাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৩৪।
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে ফরম নেওয়া বা জমা দেওয়া যাবে না। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ২১ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষে গণনা শুরু হবে। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবারও এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন