বর্তমান যুগে ফেসবুক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের জন্য আয়ের একটি বড় সুযোগ হিসেবেও পরিণত হচ্ছে। ভিডিও কনটেন্ট, লাইভ স্ট্রিম, পেজ মনিটাইজেশন ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় অনেকেই নিজেদের সময় ব্যয় করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত জনপ্রিয়তা ও আয়ের লোভ অনেক তরুণকে তাদের ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতা হারাতে বাধ্য করছে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ দৈনিক ফেসবুকে সক্রিয়। এর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ তরুণ নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করে মনিটাইজেশনের চেষ্টা করছেন। তবে তাদের একটি বড় অংশ কেবল ভিউ ও লাইক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। মানসম্মত ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরির চেয়ে ট্রেন্ডি বা বিতর্কিত বিষয়বস্তু এখন বেশি প্রচলিত।
স্থানীয় কলেজের এক ছাত্র আশিক রহমান (ছদ্মনাম) জানান, ‘শুরুতে পড়াশোনার পাশাপাশি ভিডিও বানাতাম। এখন শুধু ট্রেন্ডি কনটেন্টে সময় দিচ্ছি, কারণ ভিউ ও আয়ের চাপ অনেক বেশি। মাঝে মাঝে মনে হয় নিজেকে হারাচ্ছি।’
জনতা মহাবিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা খাতুন বলেন, ‘ফেসবুকের ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তার নেশা তরুণদের মানসিক চাপ ও হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ‘লাইক’, ‘শেয়ার’ এবং ‘ইনকাম’ -এর হিসাব কষতে কষতে তারা বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
সম্প্রতি রাজশাহীতে এক তরুণ ফেসবুক লাইভে দর্শক টানার জন্য বিতর্কিত ও অশ্লীল কনটেন্ট প্রচার করেন। সমালোচনার মুখে পড়ার পর তিনি পরিবার ও সমাজের চাপের কারণে ভিডিও তৈরি বন্ধ করতে বাধ্য হন।
স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা তরুণ সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
সমাজবিজ্ঞানী ড. শহীদুল ইসলাম মনে করেন, ‘ফেসবুক মনিটাইজেশন একটি ইতিবাচক সুযোগ। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না হলে তরুণরা অর্থ ও খ্যাতির পেছনে ছুটতে গিয়ে নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক মূল্যবোধ হারাবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক মনিটাইজেশনকে শিক্ষামূলক, তথ্যসমৃদ্ধ, সংস্কৃতিমূলক বা সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা উচিত। তারা মনে করেন, অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষাই প্রকৃত সাফল্য।
মন্তব্য করুন