খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বায়োটেকনোলজি একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি, পশুপালন, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান বায়োটেকনোলজির ভূমিকার কারণে উপকৃত হয়েছে। বায়োটেকনোলজিতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দ্রুতগতি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বর্তমানে (একবিংশ শতাব্দী), এটি উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যার ফলে আমরা স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং আরও অনেক কিছুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) খুবিতে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) ডিসিপ্লিনের আয়োজনে ‘টেকসই উন্নয়নে বায়োটেকনোলজি’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বায়োটেকনোলজির যাত্রা শুরু হয়েছিল নিওলিথিক যুগে- গাছপালা এবং প্রাণীদের গাঁজন এবং নির্বাচনী প্রজননের প্রক্রিয়ার সঙ্গে, ১৭ শতকে অণুজীবের অস্তিত্বের আবিষ্কার থেকে, ১৮ শতকে টিকাদানের অনুশীলন থেকে- ডিএনএ আবিষ্কার (১৯৫৩) ; বায়োটেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি (১৯৮০ এর পর) ২০ শতকে। জিন এডিটিং প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সিন্থেটিক বায়োলজি পর্যন্ত, আমরা নিজেদেরকে যুগান্তকারী আবিষ্কারের অগ্রভাগে খুঁজে পাই যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপায় পরিবর্তন করার সম্ভাবনা রাখে।
উপাচার্য আরও বলেন, বায়োটেকনোলজি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যক্তিগতকৃত ওষুধের পথ তৈরি করেছে, একজন ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপের ওপর ভিত্তি করে উপযোগী চিকিৎসার বিকল্পগুলো অফার করে। বায়োটেকনোলজি শস্যের ফলন বৃদ্ধিতে, কীটপতঙ্গ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এবং টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষির পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্ভাবনী সমাধান সরবরাহ করে বায়োটেকনোলজি। পরিবেশবিজ্ঞানের সঙ্গে বায়োটেকনোলজির সংযোগ জৈবভিত্তিক বিকল্প, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভিনব পদ্ধতির জন্ম দিয়েছে। এই উদ্ভাবনগুলো টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে অবদান রাখছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।
তিনি বলেন, বায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রে ২২ শতকে সম্ভাব্য উন্নতি কী হতে পারে? উত্তরটি বেশ সহজ- আমরা এখন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না। যখন আমরা বায়োটেকনোলজির সাফল্য উদযাপন করি, তখন এই ধরনের অগ্রগতির সঙ্গে আসা নৈতিক বিবেচনাগুলো স্বীকার করা অপরিহার্য। দায়িত্বশীল গবেষণা এবং উদ্ভাবন আমাদের প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকা উচিত, সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো হ্রাস করার সময় বায়োটেকনোলজির সুবিধাগুলো সকলের কাছে সহজগম্য করা। এই সম্মেলনে গবেষণার অন্তর্দৃষ্টি আলোচনা এবং শেয়ার করার সময় এটিকে বায়োটেকনোলজির রূপান্তরকারী শক্তি এবং ভবিষ্যতের রূপ দেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
সবশেষে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিজ্ঞানী, গবেষক এবং পেশাদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তাদের কাজগুলো জীবন সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে সমৃদ্ধ করবে এবং মানবতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি ধরে রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে প্লেনারি স্পিকার হিসেবে বায়োটেকনোলজির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির বিভিন্ন দিক পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জেল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিই ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সচিব প্রফেসর ড. মো. মুরছালিন বিল্লাহ। পরে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি ছয়টি সায়েন্টিফিক সেশনে সম্পন্ন হবে। প্রতিটি সেশনে দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত বক্তা পৃথক পৃথক রিসোর্স পারসন হিসেবে তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করবেন। সম্মেলনটি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন এবং ভারতের গবেষকরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এ সম্মেলনে প্রায় ১৭৫ জন শিক্ষক/গবেষক/বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সেশনে সরাসরি গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করবেন।
মন্তব্য করুন