বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বর্তমান উপাচার্যের (ভিসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরের ৫ তারিখ। তবে তার মেয়াদপূর্তির দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছে নতুন উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নানা আলোচনা। সেখানকার শিক্ষকদের বিভিন্ন পক্ষ থেকে শোনা যাচ্ছে একেক রকম মন্তব্য। আলোচনার বিষয়টি ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে ঠাঁই নিয়েছে শহরেও।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম দলের দাবি বর্তমান উপাচার্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব লাভ করতে যাচ্ছেন। আরেকটি দল মনে করছে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠটিতে। তবে তৃতীয় দল মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন দায়িত্ব পালন করা বর্তমান বা সাবেক কোনো শিক্ষক পেতে পারেন উপাচার্যের দায়িত্ব।
স্থানীয় সুশীল সমাজ অবশ্য দাবি করছে, যেইই দায়িত্ব পাক সে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে মনোযোগী হয়। শিক্ষকদের দ্বিতীয় দলটির সূত্র মোতাবেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে এবার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে সেখানে। তেমনটাই নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর পেয়েছেন তারা। আর প্রথম দলটির দাবি বর্তমান উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকাণ্ডে সরকার বিব্রত হয়নি। এ ছাড়া সামনেই রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এই মুহুর্তে উপাচার্য পদে কোন রদবদল করবে না সরকার। তবে একটি পক্ষ দাবি করছেন, বর্তমান উপাচার্য নতুন মেয়াদে দায়িত্ব লাভ করবেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত দিনে কোনো উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন কিংবা বর্তমানে করছেন এমন কাউকে উপাচার্য করা হতে পারে।
কানাঘুষা চলছে বর্তমান ট্রেজারার ড.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া উপাচার্য হবার প্রত্যাশায় উপরমহলে দৌঁড়ঝাপ করছেন। এ ব্যাপারে তার মক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে দায়িত্ব দিবেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করে যাবো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন জানান, যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এখানকার উপাচার্য হবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি কারো নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করবো না। এছাড়া বর্তমান উপাচার্য মহোদয়কে সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দিলে তিনি তা পালন করবেন।রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যাঁকেই দায়িত্ব দিবেন আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, বর্তমান উপাচার্য তার মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়নই করেননি এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেশনজটের ব্যাপারেও ছিল উদাসীনতা। তার অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে অনেককে। আমরা কোনোভাবেই এই উপাচার্যকে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক এমন উপাচার্য নিয়োগ দিবেন বলে আশা রাখি। তাই, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ থাকবে একজন দক্ষ এবং বিজ্ঞ শিক্ষক যেন এখানকার উপাচার্য পদে নিয়োগ পান।
স্থানীয় ব্যক্তিবর্গও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়কারী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, উপাচার্যের চেয়ারে যিনিই বসবেন তিনি যেন চেয়ারটিকে ব্যক্তিগত উন্নয়নের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানোন্নয়নে কাজে লাগান সেই প্রত্যাশা থাকবে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন একজনকেই সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন