রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও চরম আবাসন সংকটে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১২ শতাংশ। বাকি ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী সিট না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের ২২টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। এর বিপরীতে ৩টি আবাসিক হলে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৪৮টি। হিসাব অনুযায়ী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১২ শতাংশ। বাকি ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থীকে হলের বাইরে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আবাসিক সংকটই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বড় সমস্যা। নির্মাণ কাজ থমকে থাকা ১০ তলা ভবন বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলসহ আবাসিক হল রয়েছে মাত্র চারটি। এর মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক আসন ৩৬৬টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২৪০টি। আর মেয়েদের একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আসন সংখ্যা ৩৪২টি । যা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় অতি নগণ্য।
আবাসিক সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে ম্যাচ ও ভাড়া বাসায়। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে ম্যাচ বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। কেউ দু-এক মাসের জন্য উঠতে চাইলেও তাকে তিন মাসের টাকা জামানত দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা।
মেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি এর ভুক্তিভোগী। ছেলেদের জন্য ২টি হল থাকলেও মেয়েদের রয়েছে মাত্র ১টি হল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকই মেয়ে শিক্ষার্থী।বাইরের ম্যাচ ও ভাড়া বাসায় নিরাপত্তাসহ নানা সমস্যা পোহাতে হয় তাদের।
এদিকে হলে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী সিট পেলেও অধিকাংশ সিট দখল করে আছে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সাবেক শিক্ষার্থীরা।
হল কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩৬৬ জনের মধ্যে ২০০ জন বৈধ সিট বাকি অবৈধভাবে থাকা১৬৬জন জনের অধিকাংশই সাবেক শিক্ষার্থী।
শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ২৪০ জনের মধ্যে ১৭০ জন বৈধ সিটে বাকি অবৈধভাবে থাকা ৭০ জনের অধিকাংশই ছাত্রত্ব শেষ হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেরও একই অবস্থা।
আবাসিক হলে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,একটি রুমে চার জনের আসন থাকলেও রাজনৈতিক নেতারা সেখানে ৮-১৩ জনের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে গাদাগাদি করে থাকার কারণে নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনার পরিবেশ। একারণে খাওয়া, গোসল, ঘুম সবকিছুই পালা করে করতে হচ্ছে তাদের।
বঙ্গবন্ধু হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছোট এক বিছানায় দুজন থাকা খুবই কষ্টকর। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। গাদাগাদি থাকার কারণে পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারি না।
হলে সিট না পাওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিক হলে সিট না পাওয়া সত্যি অনেকটা আক্ষেপ ও খারাপ লাগার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষের পথে হলেও সিট পাইনি। আবাসন সংকটের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা অপ্রতুল। একই সঙ্গে হলে বৈধ পন্থায় সিট বণ্টনে রয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাব। আমরা ছাত্র রাজনীতি করি না এ জন্য হলের আবাসিক সুবিধাও পাই না।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, আবাসন সংকট সমস্যাটি আমাদের দীর্ঘদিনের। প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর তুলনায় মাত্র কয়েকশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বিশেষ প্রকল্পের দশ তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ছাত্রী হল দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা জটিলতায় অনিশ্চয়তায় পরে রয়েছে। আশা করি, বর্তমান প্রশাসন আবাসন সংকট দূর করতে নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি অডিটোরিয়াম, টিএসসিসহ অবকাঠামোগত সব উন্নয়নে উদ্যোগী হবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট বিজন মোহন চাঁকী বলেন, আবাসন সংকটের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা ইউজিসিকে তিনটি হল প্রস্তাবনার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ভৌত অবকাঠামো সংকট নিরসনে ৮৭৫ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে ভৌত অবকাঠামগত সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন