পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় খাবার পানির সংকটে ভুগছেন। পুরো ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সংকট বর্তমানে তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ভবন, মহুয়া ভবন, ক্যাফেটিরিয়ার ওপর তলা, এক্সাম হল বিল্ডিং এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। এমনকি শিক্ষার্থীদের পদচারণা ও আড্ডা প্রাণবন্ত থাকা স্বাধীনতা চত্বর, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং কেন্দ্রীয় মসজিদেও নেই সুপেয় পানির ব্যাবস্থা।
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পৃথক দুটি আবাসিক হলেও। ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাঁচশ ছাত্রের জন্য একটি টিউবওয়েল এবং মেয়েদের শেখ হাসিনা হলের আড়াইশ ছাত্রীর জন্য একটি টিউবওয়েল রয়েছে। হলের টিউবওয়েলগুলো নষ্ট হয়ে গেলে খাবার পানির জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। হলের ডাইনিংয়ে পানির ব্যবস্থা থাকলেও সেটি টাংকি থেকে আসার কারণে পান করতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাস বা পরীক্ষার চলাকালীন সময়ে খাবার পানির প্রয়োজন হলে আমাদের মেডিকেল সেন্টারের সাবমারসিবল পাম্প অথবা ক্যাফেটেরিয়ায় যাওয়া লাগে। কিন্তু ক্লাস রুম ও পরীক্ষার হল থেকে মেডিকেল সেন্টারে যাতায়াত সময় সাপেক্ষ হওয়াতে অনেকই সেখানে যেতে আগ্রহী হন না। এদিকে ক্যাফেটেরিয়ার পানি অনেকটা সহজলভ্য হলেও সেখানের পানি সরাসরি ছাদের টাংকি থেকে আসে। যে টাংকি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তবে পানির অন্য ব্যবস্থা না থাকাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ওই পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফিল্টার বসানোসহ নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তামিম কালবেলাকে বলেন, শরীর সুস্থ রাখতে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে এ নিরাপদ খাবার পানি পেতে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরতে হয়। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। আমদের চাওয়া ক্যাম্পাসের সর্বত্রই সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আরেফিন বলেন, আমাদের ছেলেদের আবাসিক হলে একটি মাত্র টিউবওয়েল যার পানিতে আছে আয়রণ। একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া ভবনের পাশাপাশি হলের দুই ব্লকে দুটি ফিল্টার প্রয়োজন। যদি এমনটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আমরা নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির অভাব পূরণ করতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে কর্মরত এক ব্যাক্তির কালবেলাকে জানান, অনিরাপদ পানি পান করার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং পানিবাহিত রোগ নিয়ে নিয়মিতই তারা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল সেন্টারে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্বর, ঠান্ডার পর আমরা পানিবাহিত রোগের রোগী বেশি পাই। আমরা এখান থেকে শিক্ষার্থীদের ডায়রিয়া, আমাশয়ের ওষুধ দিয়ে থাকি। এ ছাড়াও মাঝে মধ্যে এখানে হেপাটাইটিস ‘এ’ এর রোগীও পাওয়া যায়’।
প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, করোনা মহামারীর আগে একাডেমিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া এবং মহুয়া ভবনের সামনে তিনটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার পর সেগুলো নষ্ট হয়ে আছে। ক্যাফেটেরিয়ার সামনে একটি সাবমারসিবল পাম্প ছিল সেটিও এখন নষ্ট। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার পানির সংকট।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, একাডেমিক ভবনের প্রতি তলাতেই সাবমারসিবলের লাইন দেওয়া আছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সে লাইন থেকেই পানি সংগ্রহ করেন। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি না জানার কারণেই হয়তো খাবার পানির জন্য সমস্যায় পড়েন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রকৌশলী (সিভিল) ফরিদ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এ বছরে একাডেমিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারসহ কয়েকটি জায়গায় সুপেয় পানির ফিল্টার বসানো হবে।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক ড. নাজমুল হোসেন বলেন, খাবার পানির যে সংকট সেটি নিরসনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। চলতি বছরে একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়াসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন