খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কেন্দ্র করে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও আশপাশে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।
বিগত সময়ের কিছু ঘটনা দেখলে বিষয়টির ভালো ধারণা পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর রোডে এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে মাঝে মাঝেই বহিরাগতদের নেশারত অবস্থায় পাওয়া যায়। ইসলামনগর রোডের দোকানগুলোতেও তাদের অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে মাদকসহ আটক করা হয়।
প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা প্রহরীদের হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও বহিরাগতদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের ব্যবসা করার অভিযোগও রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু শুক্রবার নয়, যে কোনো ছুটির দিনেই বহিরাগতদের আনাগোনায় বিশ্ববিদ্যালয় একটি পার্কে পরিণত হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। সূর্যমুখী ফুলের বাগান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অযথা বহিরাগতদের যাতায়াত বেড়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের আনাগোনায় ক্যাফেটেরিয়া এবং টং দোকানগুলোতে অনেক সময় বসার জায়গা পান না শিক্ষার্থীরা।
নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে বহিরাগতদের দ্বারা প্রতিদিনই হুমকির শিকার হতে হয় তাদের। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার কারণে তারা চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সঠিকভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেন না। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘খুলনায় আসার পর ইভটিজিংয়ের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে বেশ অস্বস্তি লাগত। এখন ক্যাম্পাসেও এসবের শিকার হচ্ছি। বিশেষ করে বাগানের আশপাশের এলাকা আর ক্যাফেতে বাইরের মানুষ বেশি থাকে। ওইসব জায়গায় বিভিন্ন টাইপের বাজে মন্তব্যর শিকার হই।’
পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী গোফফার হোসেন ফাহিম বলেন, এখন আর তপন বা ক্যাফেটেরিয়া নিজেদের বলে মনে হয় না, মনে হয় বাইরের কোনো পার্ক। বিকেলের পর ওদিকে গেলে দেখা যায় আশপাশে অপরিচিত মানুষ তাই নিজে থেকে আর যেতে ইচ্ছে হয় না। নাস্তা বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জন্য হলরোডে যাই। আমি মনে করি, বহিরাগতদের অবাধে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিমুখ হচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, বিকেল বেলা বের হলে মনে হয় এটি একটি পার্ক। তাছাড়া মাঝে মাঝেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথাও শোনা যায়। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এ বিষয়গুলো একটু নিয়ন্ত্রণ করা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তর থেকে রাতে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তদারকি করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক রাত ৮টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রবিষয়ক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী এটি ওপেন ইউনিভার্সিটি। যার কারণে তাদের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ করতে পারি না। আমরা ফুলবাগান করেছি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং পাখিদের অভয়ারণ্য বানানোর জন্য। আর বহিরাগতদের দ্বারা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষীদের হুমকির ব্যাপারে শুনেছি আমরা যতটা পারি এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে বহিরাগতদের অবাধে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাই না। তবে এসব সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন