বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের বাইরে থাকতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
রোববার (২৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। পেনশন স্কিমে বৈষম্য সৃষ্টি আমলাদের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়। এসময় তারা বলেন বৈষম্যমূলক এই পেনশন চালু হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে পারমাণবিক বোমা দরকার নেই, শিক্ষাব্যবস্থাকে আঘাত করলেই হয়। বাংলাদেশ যখনই এগিয়ে যাচ্ছে তখনই একটি মহল শিক্ষকদের পেছনে লাগে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুন্দর একটা স্কিম কিন্তু একটি মহল অল্প কয়েকজন পেশাজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের আওতামুক্ত রেখেছে। দাবি আদায়ে তীব্র আন্দোলন করতে হবে।
মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমরা তো শিক্ষক মানুষ কম বুঝি হয়তো, তাই আমাদের ওপর এ পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্কিমে কন্ট্রিবিউট করলে পাবেন, না হলে পেনশন পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে হেয় করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে। দেশে কোনো সমস্যা না থাকলে আমলারা সমস্যা সৃষ্টি করে।
নীলদলের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, সরকার যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে সেক্ষেত্রে হলেও শিক্ষকদের দাবি মানা উচিত।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, পেনশন স্কিমের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তারাই এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে সর্বজনীন কীভাবে হলো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জৌলুশ নষ্ট করার জন্য, সরকারকে ভুল বোঝানোর জন্য এ স্কিম তৈরি করা হয়েছে। আত্মমর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য শিক্ষক রাজনীতির নীল সাদা রঙ বাদ দিয়ে সব শিক্ষককে একসঙ্গে হতে হবে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, এক শ্রেণিকে বাদ দিয়ে কিছু অংশকে স্কিমের আওতায় আনা কীভাবে সর্বজনীন হয়। এ কালো প্রথা চালু করার আগে সরকারকে আরেকবার ভাবার অনুরোধ করছি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাশরিক হাসান বলেন, প্রত্যয় স্কিমে বয়সসীমা ৬০ বছর দেওয়া কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বয়সসীমা ৬৫ বছর। তাই এখানে একটি ধোঁয়াশা রয়েছে। তাছাড়া আমলারা নিজেরা এ স্কিমের আওতাভুক্ত না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বড় বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের দাবি মানা না হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা আগামী মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাব।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকার প্রথমে চালু করেছিল যারা পেনশন সুবিধা পান না তাদের জন্য। কিন্তু পরে কোনো এক কুচকক্রীমহল এটা করেছে। পরে কর্মসূচিতে যাতে যাওয়া না লাগে তার আগেই আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নিবে। প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের বাদ দিতে হবে।
জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের ৪টি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তার আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সংগঠন।
মন্তব্য করুন