একটি বাইসাইকেলের দাম ১০ লাখ টাকা! শুনলে আপনি অবাক হতে পারেন। কিন্তু বহু নামিদামি কোম্পানির বাইসাইকেল রয়েছে- যার দাম লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখে্রও বেশি। এমন অন্তত ২০টি বাইসাইকেল চালাতে দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানপুত্র আশিক খানকে। এর মধ্যে অনেক সাইকেল তার সংগ্রহে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি যেন আরব ধনকুবের প্রিন্সদের রোলস-রয়েস, মার্সিডিজ বা বিএমডব্লিউ গাড়ির বিলাসিতার মতো। এজন্য ক্যাম্পাসের অনেকেই আশিক খানকে ‘বাইসাইকেল প্রিন্স’ বলে থাকেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের উপস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবাবিষয়ক সম্পাদক আশিক খানের সংগ্রহে ১০ থেকে ১৫টি বাইসাকেল রয়েছে। এসব বাইসাইকেল বিয়াঞ্চি, জায়ান্ট, ক্যাননডেল, কেনডা, ট্রিকসহ বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের। যার এক একটির মূল্য ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। দেশের বাজারে এসব বাইসাইকেল পাওয়া যায় না। এসব সাইকেল বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন তিনি।
ঢাকার বিভিন্ন সাইকেলের শোরুম এবং ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাইকেল বিক্রি হয়। সাইকেলের বাজারে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রভাব থাকলেও দেশীয় কোম্পানির ভেলোস, গোস্ট, হিরো সাইকেল, মাস্টাং, ফিনিক্স, রিফ্লেক্স বা দূরন্ত ব্র্যান্ডের সাইকেলের কদর বেশ নজর কাড়ার মতো। তবে ইলেকট্রিক বা ব্যাটারিচালিত সাইকেলও ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যেগুলোর বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে বিদেশি সাইকেলের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে জায়ান্ট, জিটি, সান্তা ক্রুজ, ট্রেক, স্পেশালাইজড, কোনা, মেরিডা, ক্যাননভেল, স্কট, মারিন ইত্যাদির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ইউরোপ-আমেরিকার এসব নামিদামি ব্র্যান্ডের সাইকেল ঢাকায় পাওয়া যায় তবে দাম অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণত আমদানি করতে চান না ব্যবসায়ীরা। এসব সাইকেল সাধারণত মাউন্টেইন সাইকেল। পাহাড়ি পথে এসব সাইকেলের ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও সমতল রাস্তা দাপিয়ে বেড়ানোর জন্যও দামি দামি ব্র্যান্ডের সাইকেল রয়েছে।
বিশ্বের বিখ্যাত বাইসাকেল কোম্পানির একটি ট্রেক; তাদের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ট্রেকের ই-ক্যালিবার ৯ দশমিক ৯ মডেলের একটি সাইকেলের দাম ১৩ হাজার ৬৯৯ ডলার; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা দাম। তাইওয়ানের সাইকেল কোম্পানি জায়ান্ট; তাদের টিসিআর অ্যাডভান্টেজ এসএল ডিস্ক মডেলের একটি সাইকেলের দাম ১২ হাজার ২০০ ডলার; যা বাংলাদেশি টাকা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। ক্যাননডেলের সুপারসিক্স ইভো কার্বন ডিস্ক ১০৫ মডেলের সাইকেলটির দাম ৪ হাজার ইউরো; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। ইতালির কোম্পানি বিয়াঞ্জির একটি সাইকেলের দাম ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ পর্যন্ত।
সাধারণত ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে সাইকেল স্পোর্টিং প্রতিযোগিতায় এগুলোর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কার্বন ডিজাইনের এসব সাইকেলে ব্যবহৃত হয় হাইড্রোলিক ব্রেকসহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। নামিদামি এসব ব্র্যান্ডের সাইকেল দেশে আনতে উচ্চ দামের পাশাপাশি শুল্কও গুণতে উচ্চহারে।বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এসব সাইকেলের নামও হয়তো জানেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি উপাচার্যের পুত্র আশিক খান এখনও শিক্ষার্থী। তিনি পড়াশোনা করেন একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। একেক দিন একেক মডেলের দামি দামি সাইকেল নিয়ে বের হতে দেখা যায় তাকে। তবে তার এসব দামি সাইকেলের উৎস সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি বিয়াঞ্চির নিউ এরাইভ্যাল ‘ওল্ট্রে রেস ১০৫ ডিআই২ ১২ এসপি’ মডেলের রোড বাইক চালাতে দেখা যায় ভিসি পুত্র আশিক খানকে। বিয়াঞ্চির ওয়েবসাইট থেকে দেখায় যায়, তার দাম ৪ হাজার ৩৪৯ ইউরো; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। শুধু বিয়াঞ্চিই না জায়ান্ট, জিটি, সান্তা ক্রুজ, ট্রেক, স্পেশালাইজড, কোনা, মেরিডা, ক্যাননভেল, স্কট, মারিনসহ বিশ্ববিখ্যাত সব কোম্পানির লাখ লাখ টাকা দামের সাইকেল ব্যবহার করতে দেখা গেছে তাকে।
বিষয়টি জানতে চাইলে আশিক খান কালবেলাকে বলেন, আমি সাইকেলিং পছন্দ করি। সাইকেলিং পছন্দ করাই বেশ কিছু সাইকেল আমার সংগ্রহে রয়েছে। পাশাপাশি আমি সাইকেল বিক্রিও করি। কেউ প্রিঅর্ডার করলে বাইরে থেকে এনে দিই। তাদের সাইকেল দিয়েই ছবি তুলে পোস্ট করি।
তবে ফেসবুকে পোস্ট করা বিভিন্ন ছবির সঙ্গে তার বক্তব্যের পুরোপুরি মিল পাওয়া যায় না। তাকে বিভিন্ন জায়গায় দামি দামি এসব মডেলের সাইকেল চালাতে দেখা যায়। বিভিন্ন ইভেন্টেও তিনি এসব দামি সাইকেল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
বিদেশ থেকে তার সাইকেল আমদানির কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি সাইকেল আমদানি করি না। বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে, তাদের কাছে অর্ডার করি; তারাই সাইকেল এনে দেয়। আমার কোনো ট্রেড লাইসেন্সে নেই।
তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ; এত দামি সাইকেল আমার নেই। আমি শুধু কাস্টমারদের সাইকেল এনে দেই।
তবে তার সঙ্গে ওঠা-বসা রয়েছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ছাত্রলীগ করেন এবং ভিসিপুত্র হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কিছু অনৈতিক আয় রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে সাহায্য করেন তিনি। এর বিনিময়ে পান মোটা অঙ্কের টাকা। অবশ্য এমন অভিযোগ ক্যাম্পাসের সর্বত্রই।
মন্তব্য করুন