মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইউনূস ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের চিঠির প্রতিবাদ ৮৬৬ ঢাবি শিক্ষকের

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নোবেলজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ১৬০ ব্যক্তির চিঠির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ আলী ও অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬৬ শিক্ষকের নাম রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ১৬০ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নোবেলবিজয়ী ব্যক্তিবর্গ এবং কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক খোলা চিঠির মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আদালতে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থরক্ষার্থে দেওয়া বিবৃতিটিতে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর আক্রমণ চলছে' বলে যে দাবি করা হয়েছে তা অমূলক ও ভিত্তিহীন। দেশের প্রচলিত আইনে চলমান একটি মামলা নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। এটি আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও শিষ্টাচার বিবর্জিত এবং একটি রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্বকে অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তারা বলেন, জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা, ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপট, ব্রিটিশ বিল অব রাইটস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রণয়নসহ পৃথিবীর সকল ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মৌলিক দর্শন হলো নাগরিকদের আইনি সমতা নিশ্চিত করা। বিবৃতিদাতারাও নিজ নিজ দেশের আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নীতিনিষ্ঠ নাগরিক হিসেবে পরিচিত। ফলে এ ধরনের পক্ষপাতমূলতক বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের নীতি ও আদর্শকেই তারা অস্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য যে, অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গ্রেপ্তার হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অথচ বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের অবস্থান আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ব্যাপারে বৈপরীত্য নির্দেশ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা এবং তৎপরবর্তী দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল। দুই দশকের বেশি সময় এ ধারা অব্যাহত ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শাসনকালে জাতীয় আন্তর্জাতিক নানা হুমকি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে আইন যে তার স্বনিয়মে পরিচালিত হয়, সেই স্বাভাবিক বিষয়টিকে বিবেচনায় না নিয়ে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হলে নিশ্চিতভাবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি বিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলো হতে তিনি খালাস পাবেন বলে বিবৃতিদাতাগণ যে দাবি করেছেন, তার মধ্য দিয়ে চলমান বিচারিক কার্যক্রম প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে এবং ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করবে। প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন ও বিচারিক নীতিমালাকে লঙ্ঘন করে একজন ব্যক্তির স্বার্থরক্ষার এ ধরনের প্রচেষ্টা নজিরবিহীন ও পক্ষপাতিত্বমূলক। তথাপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের প্রতিনিধি প্রেরণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নোবেলজয়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কোনো কোনো নোবেলজয়ী দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন, বেলারুশের আদালত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে। ফিলিপাইনে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা-র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কর ফাঁকির মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। এ সকল নোবেল বিজয়ী আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে তারা কারও দ্বারস্থ হননি।

নীল দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে ৬০ বছরে অবসরে যাওয়ার আইন অমান্য করে ৭০ বছর বয়সেও উক্ত পদ ছাড়তে সম্মত ছিলেন না। এ সংক্রান্ত মামলায় তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরে গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ফিরে পেতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রভাবশালী দেশে লবিং করেছেন।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, দাতা তহবিলের অর্থ বেআইনিভাবে হস্তান্তর, শ্রম আইন লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং তিনি আদালতের রায় মেনে নিয়ে ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেছেন। আমরা আশা করি ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিদাতা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের আইন-কানুন ও রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এবং আইনগত ও সাংবিধানিক বিধি-বিধান অনুধাবন করবেন। অযাচিত ও অনভিপ্রেত বিবৃতি দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচারিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে শিক্ষক সমাজ সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১০

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১১

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১২

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

১৩

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

১৪

অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে চিকিৎসার মান কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছায়নি : ডা. রফিক 

১৫

মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানো থালাপতির উত্থানের গল্প

১৬

চট্টগ্রামের নগরায়ণ সংকটে শহরবাসী, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নেই

১৭

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলা, ব্যাপক গোলাগুলি

১৮

ইসরায়েলে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা কতটুকু?

১৯

আন্দোলনের সময় ছাত্রদের নগ্ন ভিডিও করতেন তৌহিদ আফ্রিদি : আইনজীবী

২০
X