অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত চলচ্চিত্র ‘সাবা’ নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন লেখক ও সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম।
রাহিতুল ইসলাম বলেছেন, অবশেষে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘সাবা’। ছোটপর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর বড় পর্দায় এটাই প্রথম কাজ। জি, ঠিকই শুনেছেন। ‘প্রিয় মালতী’ আগে মুক্তি পেলেও ‘সাবা’-ই তার বড় পর্দায় প্রথম কাজ। সে হিসেবে ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল আকাশছোঁয়া। মাকসুদ হোসেন পরিচালিত এই ছবিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা কুড়িয়ে অবশেষে দেশের দর্শকদের সামনে এলো। উপহার দিল প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু। ‘সাবা’ কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়, আবেগ, ত্যাগ ও কঠিন বাস্তবতার এক মর্মস্পর্শী দলিল এটি।
গল্পের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি বলেন, সিনেমাটির গল্প আবর্তিত হয়েছে সাবা নামের এক তরুণীকে কেন্দ্র করে, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। হুইলচেয়ারে বন্দি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা (রোকেয়া প্রাচী) ও নিখোঁজ বাবার সংসারে সাবার জীবনসংগ্রামই এই চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপড়েন, মায়ের চিকিৎসার খরচ এবং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে সাবা এক অদম্য যোদ্ধা। তার এই কঠিন পথচলায় সঙ্গী হন অঙ্কুর (মোস্তফা মনোয়ার), যার চরিত্রটি গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করে।
তিনি বলেন, গল্পটি লিখেছেন পরিচালক মাকসুদ হোসেন নিজে। চিত্রনাট্যকার ত্রিলোরা খানের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই গল্পের উপাদান নেওয়া। ত্রিলোরা খান বাস্তব জীবনে পরিচালকের স্ত্রী। ফলে এই সিনেমা যে ভিন্ন এক আবেদন ছড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য হয়ে উঠেছে বাস্তব ও জীবন্ত। মা-মেয়ের সম্পর্কের টানাপড়েন তো আছেই, বরং বাংলাদেশের অনেক নারী তার একাকী লড়াইয়ের বাস্তব চিত্র খুঁজে পাবেন এখানে।
মেহজাবীনের প্রসংশা করে তিনি বলেন, ‘সাবা’ মেহজাবীনের ক্যারিয়ারের এক মাইলফলক। ছোটপর্দায় তিনি বহু আগেই নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে কোটি দর্শকের মন জয় করেছেন। কিন্তু এই ছবিতে তিনি যা করেছেন, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। আরও নতুন করে চিনিয়েছেন নিজেকে। সাবার চরিত্রে তার অভিনয় ছিল নিখুঁত। হতাশা, ক্লান্তি, মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং নিজের ভেতরের চাপা কষ্টকে অসাধারণভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তার অভিব্যক্তি, বিশেষ করে চোখের ব্যবহার আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ছাপ ফেলবে দর্শকের মনেও। অনেক দৃশ্যে সংলাপের চেয়েও তার নীরবতাই বেশি কথা বলেছে। নীরবতাতেই মানুষের এক্সপ্রেশন বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই ছবির মাধ্যমে মেহজাবীন প্রমাণ করেছেন, তিনি কতটা পরিণত। আমার মনে হয়, বড় পর্দার জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত।
পার্শ্বচরিত্র ও অন্যান্য দিক নিয়ে তিনি বলেন, রোকেয়া প্রাচীর আসলে আলাদা করে নিজেকে প্রমাণের কিছু নেই। ইতোমধ্যে বহুবার নিজেকে প্রমাণ দিয়েছেন এই গুণী অভিনেত্রী। সাবার মায়ের চরিত্রে তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, এই চরিত্র যেন তাকে ভেবেই লেখা হয়েছে। হুইলচেয়ারের ওপরে নির্ভরশীল এক নারী, তার অসহায়ত্ব, মেয়ের প্রতি ভালোবাসা ও অভিমানের মিশেল দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। অন্যদিকে, মোস্তফা মানোয়ারও তার শান্ত ও সাবলীল অভিনয়ে অঙ্কুর চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনাও অসাধারণ। ঢাকার অতি সাধারণ অলিগলি, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং তার মধ্যেই মা-মেয়ের বেঁচে থাকার লড়াইকে ক্যামেরার ভাষায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ছবির আবহ সঙ্গীতও হৃদয়গ্রাহী।
দর্শকরা ‘সাবা’ কেন দেখবেন তারা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাহিতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সাবা’ কোনো বাণিজ্যিক বা বিনোদনসর্বস্ব চলচ্চিত্র নয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ ও মানবিক গল্পের চলচ্চিত্রটিতে আপনারা মেহজাবীন চৌধুরীর শক্তিশালী অভিনয় দেখতে পাবেন। যারা বাস্তবধর্মী গল্প পছন্দ করেন এবং কঠিন জীবনসংগ্রামের গল্প পর্দায় দেখতে ভালোবাসেন, এই সিনেমা তাদের জন্য। আমার ধারণা, এখনকার পরিণত দর্শকরা আসলে এমন ছবিই পছন্দ করবেন।
তিনি আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে প্রশংসিত হওয়ার কারণ যে কেবল এর গল্প বা নির্মাণশৈলী নয়, বরং এর সার্বজনীন আবেদন, তা ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়। দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীব্যাপী দর্শকের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিবে ‘সাবা’। এই সিনেমা শেষ হওয়ার পরেও আপনার ভাবনার জগতে এর রেশ থাকবে দীর্ঘদিন। আপনি নিজেও চাইবেন এই রেশ বহন করতে।
মন্তব্য করুন