

দিনদিন প্রতি ঘাটে জটিল হয়ে উঠছে চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) নির্বাচন। তপশিল অনুযায়ী গত ১ নভেম্বর এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এরপর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগের আদেশ অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এসএম নুরুল হক ও রিটের বাদী মোহাম্মদ বেলালকে গত সোমবার ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের পরিচালক প্রার্থী আকতার পারভেজের পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল হাই আইনি নোটিশ দেন।
সবমিলিয়ে পক্ষে-বিপক্ষের অভিযোগে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নির্বাচনের পরবর্তী আমেজ। তবে আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে হাইকোর্টে শুরু হতে পারে এ নিয়ে রিটের শুনানি। এরপর তা প্রকাশ করা হলেই স্পষ্ট হবে নির্বাচনের পরবর্তী করণীয়।
জানা যায়, সর্বশেষ চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর গত এক যুগে পাঁচটি পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় অনেকটা বিনা ভোটে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সাবেক এমপি এমএ লতিফ ও এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম চেম্বারকে পারিবারিক চেম্বারে পরিণত করেছিলেন। যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি শতবর্ষী এ বাণিজ্য সংগঠন।
চেম্বার সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুটি প্যানেলের মধ্যে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে আছেন বিজিএমইএ ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম নুরুল হক। অন্যদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক। চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে ১২ জন সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জন সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হন সভাপতি ও দুই সহসভাপতি। তবে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে এবার পরিচালক হওয়ার পথে ছিলেন তিনজন করে মোট ছয়জন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক ও পারিবারিক বলয় থেকে বেরিয়ে আগামী দিনে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের প্লাটফর্ম হিসেবে দেখতে চান তারা।
জানা যায়, চেম্বারের দুই শ্রেণির সদস্যের অংশগ্রহণ বাদ দিতে এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল। আদালতেও এ বিষয়ে রিট করেন তিনি। ২২ অক্টোবর রিট শুনানির পর ওই দুই শ্রেণিকে ছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুই শ্রেণিকে বাদ রেখে নির্বাচন পরিচালনার আদেশ দিয়ে ছিলেন উচ্চ আদালত। সেই আদেশের পর ২২ অক্টোবর আপিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আপিল শুনানির পর এবার নির্বাচন দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এসএম নুরুল হক জানান, শুনানি শেষে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল আদালত এ বিষয়ে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া রিট দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। আর হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন। সেই রিটের প্রেক্ষিতে রোববার থেকে দুপক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ গত ৩০ অক্টোবর সর্বশেষ নির্দেশনায় ৪টি ক্যাটাগরির সবগুলোতেই চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন স্থগিত করেন। একই সঙ্গে চেম্বার নির্বাচনে টাউন অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্রেড গ্রুপ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে ১৪ দিন সময় বেঁধে দেন। সেই আদেশে বিবদমান ৬টি পক্ষকে বিবাদী করতে বলা হয় আদেশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
অন্যদিকে গত ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের আদেশ অবমাননার অভিযোগে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এসএম নুরুল হক ও রিটের বাদী মোহাম্মদ বেলালকে গত সোমবার ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের পরিচালক প্রার্থী আকতার পারভেজের পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল হাই আইনি নোটিশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, ৩০ অক্টোবর আপিল বিভাগ টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের প্রতিনিধিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিবাদী করার নির্দেশনা দিলেও আপিল বিভাগের সে আদেশ অমান্য করেছেন রিটের বাদী মোহাম্মদ বেলাল। তার এই বিলম্ব ও এড়িয়ে যাওয়ার আচরণ থেকে স্পষ্ট, তার উদ্দেশ্য ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ব্যাহত করা।
আরেক নোটিশ প্রাপক এসএম নুরুল হক চেম্বার নির্বাচন বানচাল করার অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশ করেছেন। এসএম নুরুল হক সমাবেশে দাবি করেছেন, নির্বাচন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বন্ধ করেছে। অথচ বাস্তবে তারাই একের পর এক মামলা করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছেন। এতে তাদের দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নোটিশে নুরুল হককে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও বলা হয়।
মন্তব্য করুন