

পরিবেশের নিয়ম মানা নিয়ে টম-জেরি খেলা হয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘একদিকে সরকার ইটভাটা বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়, অন্যদিকে উন্নয়ন কাজের ব্যাঘাত হবে বলে আবার চালু করা হয়।’
রোববার (১৬ নভেম্বর) গণপূর্ত অধিদপ্তরের পূর্ত ভবন সম্মেলন কক্ষে সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য পরিবেশ দূষণ হবে? বিশ্বের উন্নত কোনো দেশে কিন্তু ইটভাটা নেই, সেসব দেশেও উন্নয়ন হচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে ইটভাটা রাখতে হবে কেন। ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করতে হবে। এজন্য একটি নিয়ম করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকরা জমিতে ফসল চাষ করে। কিন্তু রাতের আঁধারে সেই ফসলসহ মাটি কেটে নিয়ে যায় ইটভাটার লোকরা। আমাদের যে প্রশাসন আছে, তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’
আবাসনে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্লক ব্যবহার না করলে আবাসনের অনুমোদন না দেওয়ার আহ্বান জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এজন্য তিনি এখন থেকে ব্লক ব্যবহার করার নিয়ম তৈরি করার নির্দেশনা দেন। নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্লক ব্যবহার করলে ইটের ব্যবহার কমে আসবে এবং ধীরে ধীরে ইটের ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ধানমন্ডি লেক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী ও গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে শুরু করে নানা জটিলতা রয়েছে। এসব আমাদের পুরো সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। একদিকে সরকার ইটভাটা বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়, অন্যদিকে উন্নয়ন কাজের ব্যাঘাত হবে বলে আবার চালু করার কথা বলে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ দূষণ- এটা হয় না। বিশ্বের উন্নত কোনো দেশে কিন্তু ইটভাটা নেই। সেসব দেশেও উন্নয়ন হচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে ইটভাটা রাখতে হবে কেন। ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করতে হবে। এজন্য একটি নিয়ম করা যেতে পারে। রাজউক যদি বলে দেয় ৩০ শতাংশ ব্লক ব্যবহার না করলে আবাসনের অনুমোদন দেওয়া হবে না, তাহলে ইটের ব্যবহার কমে যাবে।’
এ সময় সেমিনারে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশের স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মাহমুদ আলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনসহ তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা।
সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বিচার হাসপাতাল, এতিমখানা, পার্ক এসব স্থাপনাগুলো যদি ঠিকমতো মেরামত করা যায়, তাহলে মানুষ ভালো সেবা পাবে। কাজের মান ভালো করলে মানুষের আস্থা ফিরবে। যেসব জায়গা দখলে চলে গেছে, সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। সরকারি কাজে মেরামত ও নির্মাণ কাজের মান বাড়াতে হবে।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে যে শর্তে ধানমন্ডি লেক দেওয়া হয়েছিল, সেটা যদি তারা মানতে না পারে তাহলে সিটি করপোরেশন থেকে ধানমন্ডি লেক তাদের কাছে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী কভার দিয়ে ঢেকে রাখার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নিতে হবে। নির্মাণের সব নিয়ম মেনে সব কাজ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।’
মন্তব্য করুন