বিশ্ব সিনেমার জগতে আবারও বাজতে চলেছে রোমাঞ্চের দামামা! পর্দা কাঁপাতে, শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশন আর দুর্দান্ত চমকে ফিরছে টম ক্রুজের ‘মিশন ইম্পসিবল : ফাইনাল রেকনিং’। ২৩ মে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হচ্ছে অ্যাড্রেনালিনে ভরপুর মিশন। আর এ আনন্দ শুধু হলিউড ভক্তদের নয়। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সেও একযোগে মুক্তি পাচ্ছে এই বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র। একই দিনে রুপালি পর্দায় নামছে আরেক ব্লকবাস্টার প্রতিশ্রুতি মার্ভেল স্টুডিওর ‘থান্ডারবোল্টস’। দুই মহাশক্তিধর সিনেমার মুখোমুখি সংঘর্ষে এখন যেন আগুন লাগার অপেক্ষা।
‘মিশন ইম্পসিবল : ফাইনাল রেকনিং’ হলিউড সুপারস্টার টম ক্রুজের আইকনিক সিনেমা ‘মিশন ইম্পসিবল’ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা বরাবরই তুঙ্গে থাকে। এ ধরেন ফ্র্যাঞ্চাইজির ৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এবার ভক্তরা মুখিয়ে রয়েছেন সিরিজের অষ্টম ছবিটি দেখার জন্য। সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। যেখানে অংশ নিয়েছেন টম ক্রুজসহ ছবির কলাকুশলীরা। তিন বছর আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’ নিয়ে যেভাবে উড়াল দিয়েছিলেন, সেই একই কায়দায় আবারো আলোড়ন তুললেন টম ক্রুজ। এবার তিনি নিয়ে এসেছেন ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারির পরিচালনায় ‘মিশন ইম্পসিবল : ফাইনাল রেকনিং’। সিনেমাটিকে এই বছরের কান উৎসবের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত হলিউড প্রিমিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। ছবিটি স্ক্রিনিংয়ের পর কানে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে করতালি দেন দর্শকেরা। আবেগঘন বক্তব্যে টম ক্রুজ বলেন, ‘ছোটবেলায় এমন কিছু কল্পনাও করিনি। আজ ৩০ বছর ধরে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে আপনাদের বিনোদন দিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।‘ ২০১৫ সালের ‘রগ নেশন’ থেকে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্ব নেয়া ম্যাককোয়ারিকে উদ্দেশ্য করে টম বলেন, ‘তোমার সঙ্গে আরো অনেক সিনেমা করতে চাই।‘
২০২৩ সালের ‘ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’-এর সিক্যুয়েল ‘ফাইনাল রেকনিং’। কাহিনি ঘোরে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো এআই দুর্যোগের আবর্তে, আর সেই চিরচেনা টম ক্রুজ স্টাইলে একের পর এক ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করার গল্প। এবারের ছবির বাজেট প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বিগত কিস্তি ‘ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’ ৫৭১ মিলিয়ন ডলার তুললেও প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি। তাই এই কিস্তি ঘিরে উত্তেজনা এবং বক্স অফিসের চাপ দুটোই তুঙ্গে। ছবির ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই যেন নতুন ঝড়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেই চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন দৃশ্যের ঝলক দেখা গেছে ট্রেলারে। টম ক্রুজ একটি ফাইটার জেট থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং পরবর্তী সময়ে তাকে একটি উলটেপড়া বিমান থেকে ঝুলতে দেখা যায়। এ ছবিতে আরও রয়েছে একটি ডুবোজাহাজের মধ্যে ভয়ংকর মারামারির দৃশ্য। দেখা যাবে আরও একটি মারাত্মক স্ট্যান্ট যেখানে তিনি একটি বিমান থেকে ঝুলছেন।
এ দৃশ্যটির শুটিং কতটা মারাত্মক ও ভয়ংকর ছিল তা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে টম বলেন, ‘যখন আপনার মুখটি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ মাইলেরও বেশি গতিতে ছোটা কোনো যানের (বিমানের) অভিমুখে থাকে, তখন বুঝবেন সময়টা আপনার জন্য কতটা কঠিন। কারণ, তখন আপনি অক্সিজেন পাচ্ছেন না। তাই এ দৃশ্যটির শুটিংয়ের জন্য আমাকে শ্বাস নেওয়ার বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘কাজটি করতে গিয়ে মাঝে মাঝে আমি শারীরিকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতাম; আমি ককপিটে ফিরে যেতে পারতাম না।’ ছবিতে টম ক্রুজ ছাড়াও হেইলি অ্যাটওয়েল, ভানেসা করবি, সাইমন পেগসহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন। জানা গেছে, আইএমএফ এজেন্ট ইথান হান্টের চরিত্রে টম ক্রুজের এটিই শেষ দেখা হতে পারে। কারণ আটটি সিনেমার পর ‘মিশন : ইম্পসিবল’ সিরিজের একটি নাটকীয় সমাপ্তি তুলে ধরার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন টম।
‘থান্ডারবোল্টস’
মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স-এর পঞ্চম ধাপের শেষ চলচ্চিত্র ‘থান্ডারবোল্টস’। গত ২ মে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাওয়া ছবিটি দর্শক সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ৭৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে এই ছবি, যা গ্রীষ্মকালীন সিনেমা মৌসুমের জন্য একটি শক্তিশালী সূচনা। আন্তর্জাতিকভাবে এটি ৮৬.১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, ফলে মোট বিশ্বব্যাপী আয় দাঁড়িয়েছে ১৬২ মিলিয়ন ডলার। সমালোচকরা এই সিনেমার প্রশংসা করেছেন এর গভীর চরিত্র বিশ্লেষণ, মনস্তাত্তি¡ক থিম এবং অভিনয়ের জন্য। বিশেষ করে ফ্লোরেন্স পিউ এবং সেবাস্টিয়ান স্ট্যানের অভিনয় উল্লেখযোগ্য।
রটেন টমেটোস : সমালোচকদের ৮৮% ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছে, যা ২০২১ সালের ‘স্পাইডার-ম্যান : নো ওয়ে হোম’-এর পর সর্বোচ্চ। সিনেমাস্কোর : দর্শকরা সিনেমাটিকে ‘এ’ রেটিং দিয়েছে। মেটাক্রিটিক : সমালোচকদের গড় স্কোর ৬৮, যা সাধারণত অনুকূল হিসেবে বিবেচিত। সমালোচকরা ফ্লোরেন্স পিউঘের অভিনয়কে বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন।
এরিক পিয়ারসন এবং জোয়ানা ক্যালোর চিত্রনাট্য থেকে ছবিটি পরিচালনা করেছেন জ্যাক শ্রিয়ার। এতে অভিনয় করেছেন ফ্লোরেন্স পু, সেবাস্তিয়ান স্ট্যান, ওয়াট রাসেল, ওলগা কুরিলেনকো, লুইস পুলম্যান, জেরাল্ডিন বিশ্বনাথন, ক্রিস বাউয়ার, ওয়েন্ডেল পিয়ার্স, ডেভিড হারবার, হান্না জন-কামেন এবং জুলিয়া লুই- ড্রেফাস। ছবিতে একদল অ্যান্টিহিরো একটি মারাত্মক ফাঁদে আটকা পড়ে এবং একটি বিপজ্জনক মিশনে একসাথে কাজ করতে বাধ্য হয়। একটি অস্বাভাবিক সুপারহিরো দলের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি, যারা মূলত অ্যান্টিহিরো বা বিতর্কিত অতীতের চরিত্র।
ছবিতে দেখা যায় যে ইয়েলেনা বেলোভা, বাকি বার্নস, রেড গার্ডিয়ান, ঘোস্ট, টাস্কমাস্টার এবং জন ওয়াকার এই ছয়জন অ্যান্টিহিরো একটি মারাত্মক ফাঁদে পড়ে যায়, যা তৈরি করেছে ভ্যালেন্টিনা অ্যালেগ্রা দে ফন্টেইন। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে তারা একটি বিপজ্জনক মিশনে অংশ নিতে বাধ্য হয়, যেখানে তাদের নিজেদের অতীতের অন্ধকার দিকগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। এই দলের সদস্যরা একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসী এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্পূর্ণ, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা একটি দল হিসেবে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে। এই সিনেমাটি মার্ভেল স্টুডিওর একটি নতুন দিক নির্দেশ করে, যেখানে তারা অ্যান্টিহিরোদের মনস্তাত্ত্বিক দিক এবং তাদের অতীতের ট্রমা নিয়ে কাজ করেছে।
এটি মার্ভেলের পূর্ববর্তী কিছু সিনেমার তুলনায় আরও গভীর এবং সংবেদনশীল। এটি তাদের অতীতের ভুল এবং মুক্তির গল্প। যারা মার্ভেলের নতুন দিক দেখতে চান এবং চরিত্রের গভীরতা উপভোগ করেন, তাদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দেখার মতো সিনেমা।
মন্তব্য করুন