জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন শীর্ষক’ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিবুদ্ধিজীবীর সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এডুসেন্ট্রিক প্রকাশক ও মুন্সিয়ানার সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন মিরানের স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে।
কবি মনির ইউসুফের সঞ্চালনা ও সমাজ গবেষক নির্বাণ পালের সমন্বয়ে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শাহজাদা মহিউদ্দিন। বিশেষ আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. সোহরাব হাসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক রাষ্ট্রচিন্তক মাহবুবু কামাল, ধর্মতত্ত্ববিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই, লেখক ও গবেষক শাওয়াল খান।
আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আতা উল্লাহ খান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পাভেল মার্শাল, মোহাম্মদ আলী, শিশু পল্লী, পরিচালক; আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক, মহেশখালি সমিতি; সাঈদুর রহমান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী জসিম কাতাবি, আমেরিকান প্রবাসী কবি ইউসুফ রেজা, সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল, ডুসাম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতিমা তাসনিমা ঝুমা, ক্যালিফোর্নিয়া প্রবাসী প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা কাফিনুর-ইআজিজ, ইঞ্জিনিয়ার সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশগত বিপর্যয় রোধকল্পে বিভিন্ন কথা বলেন। রাষ্ট্রচিন্তক মাহবুব কামাল বলেন, উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। এগুলো ৯৯ ভাগ মাটির তৈরি এবং বিভিন্ন স্থানে এগুলো ভেঙে গেছে। আশু পরিকল্পনা করে এগুলো মেরামত ও স্থায়ী কনক্রিটের বেড়িবাঁধ করা জরুরি। আবার ’৯১ এর মতো দুর্যোগ হলে লাখ লাখ লোক মারা যাবে, তলিয়ে যাবে সমুদ্র জলে। এটা উপকূলবাসীর শুধু জীবন রক্ষায় কাজ করবে তা নয় প্রবল জোয়ার থেকেও বাঁচাবে আর কানেকটিং সড়ক হিসাবে কাজ করবে।
সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল বলেন, আমাদের আবাহাওয়া সতর্ক সংকেত অত্যন্ত সেকেলে এবং দুর্বোধ্য। সাধারণ মানুষ এর অর্থ জানে না। বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষ ও ১ থেকে ১০নং সতর্ক সংকেত এর মানে বুঝে না। সারা বিশ্ব চলে ৫টা সতর্ক সংকেত দিয়ে লাল, নীল, সবুজ হলুদ ও অরেঞ্জ এই ৫টা সংকেতে। ব্রিটিশ আমলে নাবিকদের সাগরে পথ দেখানোর জন্য যে সংকেত তৈরি হয়েছিল তা আবহমান চলতে পারে না, এটা অবশ্যই সহজবোধ্য ও জনবান্ধব করতে হবে।
গ্রিন বেল্ট এনজিও’র প্রধান নির্বাহী জসিম কাতাবী বলেন, উপকূলকে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে প্যারাবন কিন্তু দুর্বৃত্তরা নির্বিচারে প্যারাবন ধ্বংস করছেন। এ কাজে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত সবাই একজোট হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ওদের প্রতিরোধ বা মামলা করা সম্ভব নয়। আমাদের কেন্দ্রীয়ভাবে একটা কমিটি করতে হবে যারা পরিবেশ ধ্বংসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে মামলা করবে। একমাত্র মামলাকেই অপরাধীরা ভয় পায়।
গণমাধ্যম গবেষক লেখক সাওয়াল খান বলেন, নারীরা দুর্যোগে সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ’৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্যোগ প্রতিরোধ এর প্রস্তুতি ও নীতি পরিকল্পনায় নারীদের বাঁচানোর আালাদা কর্মসূচি থাকতে হবে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শাহজাদা মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী উপকূলীয় জনগণের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। আপনাদের প্রস্তাবনাগুলো পরিবেশ ও দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বক্তারা আরও বলেন, স্থানীয় ও জাতীয় দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মহেশখালী রক্ষা, কক্সবাজার রক্ষাসহ সম্প্রতি প্যারাবন নিধনের ওপর তারা কথা বলেন। তারা বলেন, এভাবে প্যারাবন নিধন হতে থাকলে মহেশখালী ধ্বংস হয়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে কক্সবাজার। তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।
সরকারের নীতিনির্ধারণী উচ্চতর পর্যায়ে বিষয়গুলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য বক্তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
মন্তব্য করুন