অনিয়মিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি এই হৃদরোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফ্যাট ও কোলেস্টেরল ধমনিতে বাধা তৈরি করে, ফলে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতাও এ ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অতিরিক্ত লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
হার্ট অ্যাটাকের কথা সামনে আসলে প্রায়ই একটা কথা শোনা যায় যে, ‘রাত বাড়লেই বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি!’ তাই প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি এমনটা ঘটে থাকে, এই তথ্যের কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চলুন, তাদের মতামত জেনে নিই—
মার্কিন কার্ডিয়োলজিস্ট ড. দিমিত্রি ইয়ারানোভ জানাচ্ছেন, রাতে শুয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন?
তার মতে, যাদের শরীরে জমে থাকা অস্থিতিশীল প্ল্যাকস কিংবা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ রয়েছে , তাদের জন্য রাত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
ড. ইয়ারানোভ একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানান, ভোরের দিকেই শরীরে হঠাৎ কর্টিসলসহ স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে ওঠে। এই অবস্থায় যদি কারও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে অথবা সময়মতো ওষুধ না খাওয়া হয়, তাহলে হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘অনেক সময় প্রথম উপসর্গই শেষ উপসর্গ হয়ে দাঁড়ায়।’ অর্থাৎ, আগে থেকে সাবধান না হলে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক প্রাণঘাতী হতে পারে।
রক্তচাপের ওষুধ কখন খাবেন? কী বলছে গবেষণা?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH)-এর গবেষণা বলছে, রক্তচাপের ওষুধ সকালে নয়, বরং রাতে খেলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে। স্পেনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাতে ওষুধ খেলে হার্ট-সংক্রান্ত মৃত্যু ও রোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
গবেষণার প্রধান লেখক ও স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ভিগোর রামন হেরমিদা জানান, ‘একই ওষুধ দিনের আলাদা সময়ে খেলে শরীরে একেবারেই ভিন্নভাবে কাজ করে, যেন একেবারে অন্য ওষুধ।’
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের সঠিক সময় মেনে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক একজনের শরীরের সমস্যা এক এক রকম হয়, তাই কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ বিশেষ জরুরি।
মন্তব্য করুন