কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লিভার সুস্থ রাখুন, ‘হেপাটাইটিস-এ’ থেকে বাঁচুন

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

‘হেপাটাইটিস-এ’ হলো লিভারের একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এটা খুব সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যেতে পারে, তবে সাধারণত এটি তেমন জটিল নয় এবং বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা ছাড়াই সেরে ওঠেন।

বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে যেখানে খাবার ও পানির নিরাপত্তা ঠিকভাবে মানা হয় না, সেখানে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। তাই হেপাটাইটিস-এ সম্পর্কে জানা এবং সতর্ক থাকা খুব জরুরি—বিশেষ করে যদি আপনি ভ্রমণে যান, বা এমন কোনো এলাকায় থাকেন যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল।

আজকের লেখায় আমরা হেপাটাইটিস এ-এর লক্ষণ, ছড়ানোর উপায়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সহজ ভাষায় বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক।

হেপাটাইটিস-এ কী?

হেপাটাইটিস মানে হলো লিভারের প্রদাহ। এটা হতে পারে বিভিন্ন কারণে—যেমন অ্যালকোহল, টক্সিন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গোলমাল বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। হেপাটাইটিস এ হলো এমনই একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস (HAV) থেকে হয়।

এটি সাধারণত তেমন গুরুতর হয় না, আর অনেক সময় নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তবে এটি খুব সংক্রামক এবং দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে সহজেই ছড়াতে পারে।

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।

হেপাটাইটিস-এ’র লক্ষণ কী কী?

অনেক সময় এই রোগে খুব বেশি লক্ষণ দেখা যায় না, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তবে বড়দের মধ্যে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:

- জ্বর বা সর্দির মতো উপসর্গ

- পেটব্যথা (বিশেষ করে পেটের ডান পাশে)

- গাঢ় রঙের প্রস্রাব

- হালকা রঙের পায়খানা

- ক্ষুধামান্দ্য ও ওজন কমে যাওয়া

- ক্লান্তি ও দুর্বলতা

- চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)

এই লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ২-৬ সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায়। ৬ বছরের নিচে শিশুদের প্রায়ই কোনো উপসর্গই থাকে না।

কীভাবে ছড়ায় হেপাটাইটিস-এ?

এই ভাইরাস সাধারণত খাবার বা পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে—বিশেষ করে যদি সেগুলো ভাইরাসযুক্ত মল দ্বারা দূষিত হয়। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

সংক্রমণের কিছু সাধারণ উপায়

- দূষিত পানি বা খাবার খাওয়া

- অপরিচ্ছন্নভাবে তৈরি খাবার

- রাস্তায় বিক্রি হওয়া কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার

- আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক

- টয়লেট ব্যবহারের পর হাত না ধোয়া

HAV ভাইরাস শরীরে ঢুকে রক্তের মাধ্যমে লিভারে পৌঁছে প্রদাহ সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন।

প্রতিরোধের উপায় কী কী?

সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো হেপাটাইটিস এ টিকা নেওয়া। এটি দুই ডোজে দেওয়া হয়—প্রথম ডোজের ৬–১২ মাস পরে দ্বিতীয়টি। টিকা দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়।

অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পরামর্শ

- সব সময় খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন

- অপরিচ্ছন্ন পানির বদলে বোতলের বা ফুটানো পানি খান

- রাস্তার খাবার ও অস্বাস্থ্যকর কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন

- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করা খাবার খান

- বিদেশ ভ্রমণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা নিন

কোন কোন ব্যক্তি বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

হেপাটাইটিস এ যে কারও হতে পারে, তবে নিচের কিছু মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন:

- যেসব এলাকায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নেই

- যারা মাদক গ্রহণ করেন

- আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা

- পুরুষ সমকামীদের মধ্যে

- যারা ল্যাবে বা পশুর (বিশেষ করে বানর) সঙ্গে কাজ করেন

- এইচআইভি পজিটিভ রোগীরা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব দেশে উন্নত স্যানিটেশন নেই, সেসব দেশের প্রায় ৯০% শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই হেপাটাইটিস এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

রোগ শনাক্ত কীভাবে হয়?

সব সময় লক্ষণ স্পষ্ট নাও হতে পারে, তাই শুধুমাত্র উপসর্গ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন আপনি HAV ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না।

HAV-এর জন্য নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা রয়েছে যা সহজেই এটি চিহ্নিত করতে পারে।

চিকিৎসা কী?

হেপাটাইটিস এ-এর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। এটি সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা মূলত উপসর্গ কমানোর জন্যই দেওয়া হয়।

যা করতে পারেন

- প্রচুর বিশ্রাম নিন

- পরিমাণ মতো পানি পান করুন

- হালকা, পুষ্টিকর খাবার খান

- অ্যালকোহল একেবারে এড়িয়ে চলুন

- কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা হয় কি?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেপাটাইটিস এ থেকে মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে, এবং ভবিষ্যতে আর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

তবে খুব কম ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে বয়স্ক বা লিভার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে, এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং লিভার ফেইলিওর হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা এবং খুব কম হলেও লিভার প্রতিস্থাপন দরকার হতে পারে।

হেপাটাইটিস এ যদিও সাধারণত গুরুতর নয়, তবুও এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিরাপদ খাবার ও পানি গ্রহণ এবং টিকা নেওয়া—এই কয়েকটি অভ্যাস আপনাকে ও আপনার পরিবারকে হেপাটাইটিস এ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

সূত্র : হেলথলাইন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাকসু নিয়ে নির্বাচন কমিশনের জরুরি বিজ্ঞপ্তি

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই ভোট গণনা চলবে : নির্বাচন কমিশনার

পাঙাশ মাছ কি সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর, যা বলছেন পুষ্টিবিদ

জাতীয় নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কোনো প্রভাব ফেলবে না : দুলু

জাকসুর ফল প্রকাশে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের আলটিমেটাম

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর, অতঃপর...

শুধু কথা নয়, পদক্ষেপ নিতে হবে ইরানকে : যুক্তরাষ্ট্র

চৌদ্দগ্রামে কমিটি বাতিলের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই : চরমোনাই পীর

কিনব্রিজ দিয়ে চলবে মোটরসাইকেল

১০

নেতা খুঁজছে নেপাল

১১

শিক্ষার্থীদের সিনেট ভবনে জড়ো হওয়ার আহ্বান শিবিরের ভিপিপ্রার্থীর

১২

গভীর রাতে কবরের বেড়ায় জ্বলে উঠল আগুন

১৩

ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ খাওয়া কি সত্যিই উপকারী? জানালেন পুষ্টিবিদ

১৪

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ৪৫ প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠনের বিবৃতি

১৫

জুমার বয়ানের সময় বৃদ্ধের মৃত্যু

১৬

ঢাকা-১৮ আসনে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ কফিল উদ্দিনের

১৭

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তামান্না

১৮

বন্ধুদের জন্য চলন্ত ট্রেন থেকে অভিনেত্রীর ঝাঁপ

১৯

পুলিশের তল্লাশিতে বিপুল বিদেশি মদ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১

২০
X