কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চোখের নীরব বিপদ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

আপনার চোখ কি ঝাপসা দেখাচ্ছে? মাঝে মাঝে কি চোখের সামনে ভেসে বেড়ানো দাগ দেখা যাচ্ছে? আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করবেন না। এটি হতে পারে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রথম সিগন্যাল।

আরও পড়ুন : কোলেস্টেরল কমাতে পুষ্টিবিদের সহজ পরামর্শ

আরও পড়ুন : তরমুজের বীজ খাওয়া কি নিরাপদ ?

ডায়াবেটিস শুধু রক্তে শর্করার সমস্যাই নয়, এটি ধীরে ধীরে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে নীরব ও ভয়ংকর একটি সমস্যা হলো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, যা চোখের রেটিনায় আঘাত হানে। চোখ তো আমাদের পৃথিবী দেখার জানালা—তাই এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কী?

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলো এমন একটি চোখের রোগ, যা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হয়ে থাকে। এই রোগে চোখের পেছনের আলো সংবেদনশীল অংশ, যাকে রেটিনা বলে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তে যদি দীর্ঘদিন শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে রেটিনার ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফুলে যায়, ফুটো হয় বা রক্তক্ষরণ করে। এতে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে, এমনকি অন্ধত্বও হতে পারে।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ

- শুরুর দিকে এই রোগের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে রোগ বাড়লে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া

- চোখের সামনে ভেসে বেড়ানো দাগ বা ফ্লোটার

- রাতে দেখতে সমস্যা

- রঙ চিনতে অসুবিধা হওয়া

এগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রোগটি কীভাবে হয়?

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে চোখের রেটিনার রক্তনানিগুলোতে ক্ষতি হয়। এটি ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে।

মাইল্ড (প্রাথমিক) ধাপ : ছোট রক্তনালীতে ফোলা ও তরল পড়ে।

মডারেট ধাপ : রক্তনালি ফুলে গিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়।

সিভিয়ার ধাপ : রেটিনায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, ফলে চোখে নতুন দুর্বল রক্তনালি গজায়।

প্রোলিফেরেটিভ ধাপ : এই নতুন রক্তনালীগুলো রক্তক্ষরণ করে বা রেটিনাকে আলাদা করে দিতে পারে — এতে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

নিচের বিষয়গুলো থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়ে :

- রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ না থাকা

- উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল

- বহু বছর ধরে ডায়াবেটিস থাকা

- ধূমপান ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন

- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস)

এই রোগ প্রতিরোধে কী করবেন?

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু নিয়ম মানলেই আপনি এই রোগ থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকতে পারেন :

- নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

- উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন

- প্রতি বছর অন্তত একবার চোখের পরীক্ষা করুন

- ধূমপান বন্ধ করুন

- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন

ডায়াগনোসিস (রোগ নির্ণয়)

চোখের ডাক্তার নিচের কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন

- দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা

- চোখের চাপ পরিমাপ (টোনোমেট্রি)

- চোখের মণি বড় করে রেটিনার অবস্থা দেখা

- OCT টেস্ট (রেটিনার ফুলে যাওয়া বা পুরু হওয়া দেখা)

- রক্তনালির ভেতর ডাই দিয়ে পরীক্ষা (FFA)

চিকিৎসা পদ্ধতি

রোগের পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয় :

প্রাথমিক পর্যায়ে : নিয়মিত পরীক্ষা আর রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট।

মাঝারি পর্যায়ে : চোখে ইনজেকশন বা লেজার থেরাপি দেওয়া হয়।

গুরুতর পর্যায়ে : চোখের ভেতর জমে থাকা রক্ত বা টিস্যু অপসারণ করতে ভিট্রেকটমি নামক অপারেশন করা হয়।

চিকিৎসার ধরন

লেজার থেরাপি : রক্তনালির ফুটো বন্ধ করতে সাহায্য করে।

ইনজেকশন (Anti-VEGF বা স্টেরয়েড): চোখের ভিতরের ফোলা কমায় এবং দৃষ্টি রক্ষা করে।

ভিট্রেকটমি সার্জারি : চোখের ভিতরের রক্ত ও দাগ সরিয়ে ফেলা হয়।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি পুরোপুরি ভালো না হলেও, সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা করলে এর অগ্রগতি বন্ধ করা সম্ভব। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য চোখের যত্ন নেওয়া শুধু প্রয়োজন নয়, বরং বাধ্যতামূলক বলা চলে।

আরও পড়ুন : দাঁতে দাগ? জেনে নিন দূর করার ৬ ঘরোয়া উপায়

আরও পড়ুন : হঠাৎ শরীর ফুলে যাচ্ছে? হতে পারে ভেতরে লুকানো বড় কোনো সমস্যা

আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে চোখের প্রতি যত্নবান হন। মনে রাখবেন, চোখ বাঁচলে তবেই তো দুনিয়াটা দেখা যাবে!

সূত্র : হেল্থ শটস

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে মেট্রো চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা

বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে অভিনেত্রী

গবেষণার ফলাফল জনহিতকর কাজে প্রয়োগ করা হবে : খাদ্য সচিব

ভোটের আগের দিন ‘গুরুতর’ অভিযোগ আনলেন উমামা

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাঈদকে পুলিশে সোপর্দ

অসুস্থ যুবদল নেতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

বাসের দরজায় ‘নকআউট’ হলান্ড, মুখে লাগল তিন সেলাই

জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস : তারেক রহমান

দুদকের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার শিবলী রুবাইয়াত

১০

এক মাসে কতটা ওজন কমানো নিরাপদ, জানালেন চিকিৎসক

১১

ভোক্তা অধিকারে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ

১২

এআই দিয়ে তৈরি ছবি কি না, চিনবেন ৫ উপায়ে

১৩

‘আর কোনো মা-বোনকে যেন স্বামী-সন্তানের জন্য কাঁদতে না হয়’

১৪

নেপালে শুরু হয়েছে আরেক ‘জুলাই আন্দোলন’?

১৫

নেপালে বাংলাদেশ দলের অবস্থা নিয়ে যা জানাল বাফুফে

১৬

কুমিল্লায় মা-মেয়ে হত্যা, সন্দেহভাজন কবিরাজ আটক

১৭

বাংলাদেশের যে গ্রামে পাঁচতারকাসহ অর্ধশতাধিক রিসোর্ট-কটেজ

১৮

ডাকসু নির্বাচন / ভিপি প্রার্থী শামীমকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ইলিয়াসের

১৯

প্রতিপক্ষের ঘুষিতে নারীর মৃত্যু

২০
X