

হার্ট অ্যাটাক শুনলেই অনেকের মনে ভয় কাজ করে। কিন্তু জানেন কি, অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে? এমনকি বুকের ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে— যাকে চিকিৎসা ভাষায় বলা হয় নীরব হার্ট অ্যাটাক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সতর্ক না হলে এই নীরব হার্ট অ্যাটাকও জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু শেখর রায় একটি দৈনিক পত্রিকাকে জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকের বেশ কিছু উপসর্গ চোখ এড়িয়ে যায় বলেই অনেকে সময়মতো চিকিৎসা নেন না।
আরও পড়ুন : শিশুর চোখের সমস্যার এসব লক্ষণ খেয়াল রাখুন
আরও পড়ুন : হাত-পা ঝিনঝিন বা তালু চুলকানো কীসের ইঙ্গিত?
চলুন জেনে নেওয়া যাক, নীরব হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধে কী করবেন।
হার্টে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনিতে ব্লক বা বাধা তৈরি হলে হার্টে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। ঠিক তখনই ঘটে হার্ট অ্যাটাক। সাধারণভাবে এর প্রধান লক্ষণ হলো বুকে চাপা বা ভারী ব্যথা, যেন কেউ বুক চেপে ধরেছে এমন অনুভূতি। অনেক সময় ব্যথা কমে না, বরং সময়ের সঙ্গে তীব্র হয়। সঙ্গে ঘাম, বমি বা বমিভাবও দেখা দিতে পারে।
সব সময় যে বুক ব্যথা হলেই হার্ট অ্যাটাক, তা নয়— আবার বুকে ব্যথা না থাকলেই যে হার্ট ঠিক আছে, সেটাও নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের ১২-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো বুকব্যথা থাকে না। এই অবস্থাকে বলা হয় নীরব হার্ট অ্যাটাক।
- বয়স্ক মানুষ, যাদের শারীরিক লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না।
- দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস বা স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা।
- যারা নিয়মিত স্টেরয়েড বা ব্যথানাশক ওষুধ খান।
- নারীরাও তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
- হাত, চোয়াল, কাঁধ বা পিঠের ওপর দিকে ব্যথা
- গ্যাসট্রিক বা বদহজমের মতো অস্বস্তি
- পেটের ওপর ব্যথা বা ভারী লাগা
- হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঝিমঝিম করা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
- ইসিজি (ECG) ও রক্তের ট্রপোনিন পরীক্ষা করে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব।
- ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে হার্টের পাম্পিং বা ক্ষতির মাত্রাও বোঝা যায়।
সময়মতো চিকিৎসা না নিলে নীরব হার্ট অ্যাটাকের জটিলতা বাড়তে পারে। এর ফলে— হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে, পাম্পিং ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।
- বুকের যে কোনো অস্বস্তি বা ব্যথা হালকাভাবে নেবেন না।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল বেশি থাকলে নিয়মিত চেকআপ করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি, বমি ভাব বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আরও পড়ুন : সকালের তাড়াহুড়োয় খেতে পারেন যে ৭ স্বাস্থ্যকর খাবার
আরও পড়ুন : শীত আসছে, ঠোঁটের যত্ন নিন এ সহজ ৫ উপায়ে
হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় নিঃশব্দে ঘটে যায়— তবে লক্ষণ চিনে ফেলতে পারলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো গুরুত্ব দিন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, আর কোনো উপসর্গে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মন্তব্য করুন