

আজকাল শরীরচর্চা, ফিটনেস এবং বডিবিল্ডিং-এর যুগে প্রোটিনের ভূমিকা নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। মাছ, মাংস, ডিম—এইসব প্রাণিজ উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ শরীরের পেশি গঠন, হাড়ের শক্তি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অপরিহার্য।
কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, অনেকেই এই প্রোটিনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এই অতিরিক্ত প্রোটিন কি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে? চলুন তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে এই বিষয়ে আসল সত্যটা বোঝা যাক।
প্রোটিনের উৎস এবং ঝুঁকির তারতম্য
সাধারণভাবে, প্রোটিন সরাসরি হার্ট অ্যাটাক ঘটায় না, বরং প্রোটিনের উৎস এবং প্রকারভেদ ঝুঁকি নির্ধারণে মূল ভূমিকা নেয়।
১. লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস
ঝুঁকি : লাল মাংস (যেমন পাঁঠার মাংস, ভেড়ার মাংস) এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসে (যেমন সসেজ, বেকন) স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম বেশি থাকে। অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায়, যা ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।
সমস্যা : এই মাংসে এল-কার্নিটাইন নামক একটি উপাদান থাকে, যা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হজম হওয়ার সময় টিএমএও নামক একটি ক্ষতিকারক যৌগ তৈরি করে। আর গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে টিএমএও-এর মাত্রা বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২. মাছ এবং পোল্ট্রি
উপকারিতা : মাছ (বিশেষ করে ফ্যাটি ফিশ যেমন স্যালমন, টুনা) হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস, যা হৃদপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পোল্ট্রি (মুরগির মাংস, চামড়াহীন) হলো চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. ডিম
উপকারিতা : ডিম প্রোটিন, ভিটামিন এবং কোলিন-এ সমৃদ্ধ। যদিও আগে মনে করা হতো ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায়, তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, বেশিভাগ মানুষের জন্য দৈনিক একটি বা দুটি ডিমের কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না।
অতিরিক্ত প্রোটিন ও কিডনি-হার্টের ওপর প্রভাব
কিডনির ওপর চাপ : অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরকে নাইট্রোজেন বর্জ্য (Nitrogen Waste) দূর করার জন্য কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যা পরোক্ষভাবে রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সুষম ডায়েট প্রয়োজন : যখন কেউ অতিরিক্ত প্রোটিন খায়, তখন ফল, সবজি, এবং গোটা শস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের পরিমাণ ডায়েটে কমে যায়। এই উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারগুলিতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, যার অভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
মোটকথা
সমস্যা প্রোটিনে নয়, বরং প্রোটিনের উৎস এবং অতিরিক্ত পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর প্রোটিন গ্রহণ করা ও ডায়েটে ভারসাম্যহীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিবর্তে মাছ, পোল্ট্রি, ডিম এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (যেমন ডাল, সয়াবিন) বেছে নেওয়া হার্টের জন্য নিরাপদ।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন