

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো আজ ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছে এবং তাদের দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। তাই আমরা বলতে চাই— আপনারা খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের মতো ভুল করবেন না।
তিনি বলেন, আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ভুলে যাচ্ছি, ছাত্র সংগঠনগুলোতে দেখা দিচ্ছে দাম্ভিকতা। তাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখার আহ্বান জানাই।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রশিবির আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাকসু ও চাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম এবং ইব্রাহিম হোসেন রনি।
উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্ট, শাখা শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
সাদিক কায়েম বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে খুনি হাসিনা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তাদের দোসররা দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছিল। গণরুম-গেস্টরুম কালচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হতো। সে সময়ে ক্যাম্পাসে ইসলাম চর্চা করা যেত না; কেউ নামাজ পড়লে বা আল্লাহ-রাসুলের কথা বললে তাকে বিভিন্নভাবে ট্যাগিং করা হতো। জুলাই বিপ্লব ও অসংখ্য ভাই-বোনের ত্যাগের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমাদের প্রকৃত মুক্তি আসেনি।
প্রধান অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন বলেন, অতীতে হলে উঠতে শিক্ষার্থীদের ৮-১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হতো। কোটি কোটি টাকার সিটবাণিজ্য চলত। এখন আমরা মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন চালু করেছি, ফলে সিটবাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। তুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হয়েছে অতীতে। পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ উত্তোলন করে সেই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মানুষ খুন করা হয়েছিল। আগস্ট বিপ্লবের পরে এসব সংস্কৃতি বদলেছে। গত সপ্তাহেই প্রক্টোরিয়াল বডি গাঁজাসহ ১০ জনকে আটক করেছে। এই ক্যাম্পাস একসময় মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। নতুন শিক্ষার্থীদের এসব থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করছি। রাকসুতে যারা জয়ী হয়েছে, তাদের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রাকসুর ভিপি ও রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল— সে ঘটনায় আমাদের চার ভাই সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব ও জব্বার শহীদ হন। তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা দেশের প্রথম শহীদ হিসেবে বিবেচিত। তখন থেকে প্রতি বছর ১১ মার্চ ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সেই দিনের জুলুম আমাদের ইতিহাসের অংশ।
তিনি আরও বলেন, আজ সেই দিন পাল্টে গেছে। যে নবীনবরণে অংশ নিতে গিয়ে আমাদের ভাইদের জীবন দিতে হয়েছিল— আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পেরেছি। ১৯৮২ সালের পর এটাই প্রথম ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বৃহৎ নবীনবরণ। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও আমাদের বোনদের রাখার সুযোগ হতো না; এবার তা সম্ভব হয়েছে— আলহামদুলিল্লাহ।
অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উপহার সামগ্রী প্রদান, ক্যারিয়ার গাইডলাইন এবং দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন