

চুল পাকা হওয়া প্রকৃতির একটি অদ্ভুত পরিবর্তন। অনেকের জন্য এটি বার্ধক্যের ছাপের ইঙ্গিত, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হয় কিছু আগেভাগেই। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই নানা বয়সী মানুষের মধ্যে চুল পাকা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, চুল পাকার ঘটনা শুধু বয়সজনিত নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্য, বিশেষ করে ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে।
জাপানের টোকিও মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি-এর একদল গবেষক ইঁদুরের ওপর পরীক্ষার মাধ্যমে একটি বিস্ময়কর তথ্য পেশ করেছেন। চুল পাকার পেছনের জটিল জৈবিক প্রক্রিয়া কীভাবে আমাদের দেহকে মারাত্মক ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে, সেই বিষয়েই গবেষণাটি আলোকপাত করছে।
চুল কেন পাকতে থাকে?
চুলের রঙ নির্ভর করে নির্দিষ্ট ধরনের কোষের ওপর, যাকে বলা হয় মেলানোসাইট স্টেম সেল। জিনগত কারণে বা পারিপার্শ্বিক চাপের প্রভাবে এই কোষ দুটি ভিন্ন দিকের দিকে যেতে পারে—একটি হলো বয়সজনিত পরিবর্তন, অন্যটি হলো টিউমার বা ক্যানসার সৃষ্টি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মেলানোসাইট স্টেম সেলের ডিএনএ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এই কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন স্থায়ীভাবে থেমে যায়। এর ফলে চুলের রঙের জন্য দায়ী কোষের সংখ্যা কমে যায় এবং চুল পেকে যায়। অর্থাৎ চুল পাকার পেছনের বিজ্ঞান হলো, স্টেম সেল বৃদ্ধির স্থগিত অবস্থা।
পাকা চুল এবং ক্যানসার ঝুঁকি কমানো
চুল পাকা হওয়ার এই প্রক্রিয়া শুধু বয়সজনিত পরিবর্তন নয়, বরং এটি আমাদের দেহকে কিছুটা ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কারণ, যেসব কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের বৃদ্ধি ও বিভাজন বন্ধ হয়ে গেলে এই কোষ থেকেই ক্যানসার হওয়া সম্ভব হয় না।
গবেষকেরা বলছেন, যদি এই কোষগুলি চুল পাকার মতো প্রাকৃতিক পরিবর্তনের দিকে না যেত, তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকত এবং সেখান থেকেই মেলানোমা জাতীয় মারাত্মক ক্যানসারের জন্ম দিতে পারত।
কখন হয় ক্যানসার?
যদি কোনো মেলানোসাইট স্টেম সেলের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু সেখানে কারসিনোজেন (যে কোনো উপাদান যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে) প্রভাবিত হয়, তাহলে কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন থামবে না। ফলে চুল পাকবে না এবং কোষে অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন চলতে থাকবে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা
গবেষকরা বলছেন, পারিপার্শ্বিক চাপ—যেমন ফ্রি র্যাডিক্যালের উপস্থিতি কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতি যদি চুল পাকাতে সাহায্য করে, তবে এটি একধরনের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। চুল পাকলে কোষের সংখ্যা কমে যায় এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি রোধ হয়। অন্যদিকে, কারসিনোজেনের প্রভাবে কোষের বিভাজন চলতে থাকলে চুলও পাকবে না, কিন্তু কোষগুলোতে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
সারসংক্ষেপ
চুল পাকতে শুরু করলে তা কেবল বয়সজনিত নয়, এটি দেহের কোষে DNA ক্ষতি এবং কোষ বৃদ্ধির থেমে যাওয়া নির্দেশ করতে পারে।
এই প্রক্রিয়া মেলানোমা ধরনের ক্যানসার থেকে পরোক্ষভাবে রক্ষা করতে পারে। তবে, যখন কারসিনোজেনের প্রভাব থাকে, তখন কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং চুল পাকতে দেরি হয়, ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। কাজেই চুল পাকা হওয়া এখন শুধু সৌন্দর্য বা বার্ধক্যের চিহ্ন নয়, এটি হতে পারে আপনার দেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষা সংকেত।
সূত্র : ইউরোপিয়ান মেডিকেল জার্নাল
মন্তব্য করুন