পৃথিবীতে যত ভালো কাজ আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো রক্তদান করা। যারা নিঃস্বার্থভাবে রক্তদান করেন, তাদের সম্মান জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের ১৪ তারিখ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন করা হয়।
কিন্তু আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, রক্তদান করলে মাত্র ১০ মিনিটেই ৫০০-৬৫০ ক্যালোরি খরচ হয়! সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি দাবিও ভাইরাল হয়েছে। তাই প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এমনটা ঘটে? চলুন তাহলে জেনে নিই চিকিৎসকরা কী বলছেন—
গত ৩ সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিওতে ভারতীয় অ্যানেসথেসিওলজি ও ইন্টারভেনশনাল পেইন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কুণাল সুদ এই বিভ্রান্তি সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য প্রকাশ্যে আনেন। তিনি জানান, যদিও শরীর রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে শক্তি খরচ করে, কিন্তু সেটাকে সাধারণ অর্থে ক্যালোরি বার্ন বা ওজন কমানো বলা যায় না। অর্থাৎ এ তথ্যের আসলে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই নেই।
ডা. সুদ বলেন, ‘অনেকে শুনেছেন রক্তদান করলে ৫০০ ক্যালোরি খরচ হয়। শুনতে ভালো লাগলেও এ দাবির পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। শরীর নতুন ব্লাড সেলস বা রক্তকণিকা তৈরি করতে শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু সেটা জিমে গিয়ে ক্যালোরি বার্ন করার মতো নয়।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, রক্তদানের সময় শরীর প্রায় ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন রেড ব্লাড সেলস বা লাল রক্তকণিকা হারায়। সেই কণিকাগুলো আবার তৈরি হয় বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায়, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০ লাখ নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াতেই যথেষ্ট শক্তি লাগে, তবে তা সরাসরি ক্যালোরি খরচের সমান নয়।
রক্তদানের আসল উপকারিতা কী?
ডা. সুদের মতে, রক্তদানের আসল সুফল অন্য জায়গায়। শরীরের অতিরিক্ত আয়রন কমে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। ফলে রক্তদানকে কখনো ওজন কমানোর উপায় হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং সমাজ ও স্বাস্থ্যের জন্য এর যে প্রকৃত অবদান, সেটাই গুরুত্ব পাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘রক্তদান কোনও ওজন কমানোর কৌশল নয়। তবে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। আয়রন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হৃদরোগ প্রতিরোধ পর্যন্ত। তাই একে জিম বা ব্যায়ামের বিকল্প ভাবার কোনও মানে নেই। বরং এটা এক অসাধারণ কাজ, যা অন্যের জীবন বাঁচায়।’
ইনস্টাগ্রাম পোস্টের ক্যাপশনে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনার শরীর আবার রক্ত তৈরি করতে কাজ করে বটে, কিন্তু প্রচলিত ধারণার মতো ক্যালোরি বার্ন হয় না। আসলেই, এটি ব্যায়ামের সমান কিছু নয়।’
সূত্র : দ্য ওয়াল
মন্তব্য করুন