মিষ্টি খাওয়া যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা প্রায় সবাই জানি। তবু চকলেট, কেক, পেস্ট্রি কিংবা মিষ্টি কিছু দেখলেই অনেকের খেতে মন চায়। এমনকি পেট ভরা খাবারের পরও এই আকাঙ্ক্ষা দেখা দেয়। কেন এমন হয়, সেটিই ব্যাখ্যা করেছেন গবেষকরা।
মস্তিষ্কের ভূমিকা
গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামের অংশ এই আচরণের পেছনে দায়ী। হিপোক্যাম্পাস মিষ্টি স্বাদের স্মৃতি ধরে রাখে। ফলে সেই অভিজ্ঞতা মনে পড়লে খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়। এ কারণে পেট ভরা থাকার পরও মস্তিষ্ক আবার মিষ্টি চায়। একই সঙ্গে সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারও ভূমিকা রাখে। সেরোটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে দুশ্চিন্তা বা বিষণ্নতা বেড়ে যায়, তখন মানুষ মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়।
পূর্বপুরুষদের অভ্যাস
গবেষকেরা বলছেন, এর পেছনে আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাসও জড়িত। খাদ্যসংকটের সময় তারা উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবার, যেমন ফল বা মধু পেলে বেশি করে খেতেন। সেই অভ্যাস জিনের মাধ্যমে এখনো থেকে গেছে। তাই আজও পেট ভরা থাকার পরও শরীর ও মস্তিষ্ক ‘সুগার বুস্ট’ চাইতে পারে।
রক্তে শর্করার ওঠানামা
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এরপর শর্করা কমে গেলে শরীর আবারও চিনি চায়। পাশাপাশি ঘ্রেলিন (ক্ষুধা উদ্দীপক) ও লেপ্টিন (তৃপ্তির সংকেত) হরমোনের ওঠানামাও বিভ্রান্তি তৈরি করে। ফলে পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে।
ক্ষতিকর প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা স্বাভাবিক হলেও এর প্রভাব ভালো নয়। নিয়মিত বেশি মিষ্টি খেলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
২. স্থূলতা ও হৃদ্রোগ
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি
আরও পড়ুন : পানি পানে এই ৪ ভুল করছেন? হতে পারে ভয়াবহ বিপদ
আরও পড়ুন : দুধ দিয়ে কফি খাচ্ছেন, এই অভ্যাস ভালো নাকি ক্ষতিকর জানাল গবেষণ
সমাধান কী?
চিকিৎসকেরা মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে—
১. খেতে হলে অল্প পরিমাণে খান
২. প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির বদলে ফল খান
৩. বিকল্প হিসেবে এক কাপ গরম চা খেতে পারেন
মাইন্ডফুল ইটিং অনুশীলন করুন, ক্ষুধা ও অভ্যাসের পার্থক্য বুঝতে চেষ্টা করুন
শেষ কথা
মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ একেবারে স্বাভাবিক। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে নানা রোগে ভুগতে হতে পারে। শরীর ও মন বুঝে খাওয়াই স্বাস্থ্যকর জীবনের পথ।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
মন্তব্য করুন