

মা-বাবা থাকলে ভাইবোনেরা একসঙ্গে হন, হাসি-আড্ডায় জমে ওঠে ঘর। উৎসব, পারিবারিক আয়োজন বা হঠাৎই কোনো দিনে সবাই এক জায়গায় মিলিত হন। কিন্তু মা-বাবা চলে যাওয়ার পর সেই টানটা যেন আলগা হয়ে যায়। যোগাযোগ কমে আসে, দেখা-সাক্ষাৎও হয় না আগের মতো।
কেন এমন হয়? এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
যখন দেখা-সাক্ষাৎ কমে যায় : রক্তের সম্পর্ক কখনো শেষ হয় না, কিন্তু সময়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। মা-বাবা থাকাকালীন হয়তো তারা সবাইকে ডাকতেন, উৎসব আয়োজন করতেন, পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে করতেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সেই কেন্দ্রবিন্দুটি হারিয়ে যায়।
ফলে ভাইবোনেরা চোখের আড়াল হতে হতে মন থেকেও দূরে সরে যান। এই দূরত্বের পেছনে সব সময় বড় কোনো কারণ থাকে না - কখনো কেবল অভ্যাসটাই হারিয়ে যায়।
শৈশবের অভিমান : শৈশবে মা-বাবার আচরণও অনেক সময় ভবিষ্যতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। কেউ বেশি আদর পেয়েছে, কেউ অবহেলিত হয়েছে - এই ছোট ছোট অনুভূতি বড় হয়ে তিক্ততা তৈরি করতে পারে।
মা-বাবা বেঁচে থাকলে অনেকেই এসব প্রকাশ করেন না, কিন্তু তাদের না থাকলে সেই লুকানো অভিমান প্রকাশ পেতে শুরু করে।
দায়িত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি : পরিবারের দায়িত্ব, বিশেষ করে মা-বাবার শেষ বয়সে যত্ন নেওয়া বা আর্থিক সহায়তা করা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। কেউ ভাবেন, তিনি বেশি দায়িত্ব নিয়েছেন, কেউ মনে করেন অন্যজন বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন।
এসব নিয়ে দূরত্ব ও মনোমালিন্য তৈরি হয়।
শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিরোধ : মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের শেষকৃত্য কীভাবে হবে, কোথায় হবে - এ নিয়েও অনেক সময় মতের অমিল দেখা দেয়। কেউ চান বিদেশে থাকা ভাই বা বোন আসুক, কেউ চান দ্রুত সব সম্পন্ন করতে। এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ ও কষ্ট তৈরি হয়, যা অনেক দিন টিকে থাকতে পারে।
তবে মনে রাখবেন সবাই এক রকম নয়। সব পরিবারের গল্প কিন্তু এমন নয়। অনেক ভাইবোনই মা-বাবার স্মৃতি ধরে রাখেন একসঙ্গে থেকে, ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে ওঠেন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কথা বলা, দেখা করা আর ক্ষমা চাওয়াই সবচেয়ে সহজ উপায়।
পরিবার মানেই তো একে অপরের পাশে থাকা, মা-বাবা না থাকলেও।
মন্তব্য করুন