

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক আবাসিক এলাকার পেছনে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন একটি নৌঘাট বছরের পর বছর ধরে সরকারি ইজারা ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ অবৈধ ঘাটকে কেন্দ্র করে একটি প্রভাবশালী চক্র নিয়মিত চাঁদা আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না ১ টাকাও। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নদীপথে চলাচলকারীরা রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। তবে কয়েক বছর ধরে এ ঘাট পরিচালনা করা হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না প্রশাসন।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌকা, জেলেদের নৌকা ও ছোট মালবাহী বোটে সরগরম থাকে ঘাটটি। তবে কোথাও টোলের নির্দিষ্ট তালিকা নেই, নেই কোনো সরকারি সাইনবোর্ড বা অনুমোদনের কাগজপত্র। পুরো কার্যক্রমই চলছে কথিত ‘লোকাল ব্যবস্থাপনায়’।
নৌকার মাঝি রাসেল বলেন, মনির ও জাবেদ নামে দুজনের লোকজন প্রতিদিন নৌকা থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করেন। টাকা না দিলে নৌকা ঘাটে ভেড়াতে দেওয়া হয় না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি নৌকা চলাচল করে, যার মাধ্যমে দিনে ২ হাজার টাকার বেশি চাঁদা আদায় হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ এ নৌঘাটটি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। পাশের একটি নৌঘাট সিটি করপোরেশনের ইজারার নিয়ম মেনে পরিচালিত হলেও এ ঘাটে দিনের পর দিন অবৈধভাবে টাকা তোলা হচ্ছে, অথচ কোনো তদারকি নেই। শুধু রাজস্ব ফাঁকিই নয়, নজরদারির অভাবে এখানে চোরাচালান, মাদক পরিবহনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই ঘাটে। ভাড়ার নির্দিষ্ট তালিকা না থাকায় অনেক সময় যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। অভিযোগ জানানোর মতো কোনো কর্তৃপক্ষও সেখানে নেই।
স্থানীয়রা বলেন, নৌঘাটটি সিটি করপোরেশনের আওতায় এনে নিয়মিত ইজারা দেওয়া হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং নদীপথে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও কার্যকর হবে। প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত এ নৌঘাটটি কীভাবে প্রশাসনের নজরের বাইরে রয়ে গেল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের কোনো অবৈধ ঘাট থাকলে সিটি করপোরেশন অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর ঘাটটি উপযুক্ত স্থানে হলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইজারার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে সিটি করপোরেশন যেমন লাভবান হবে, তেমনি সরকারও উপকৃত হবে।
মন্তব্য করুন